মো ফেরদৌস আলম

মেনা শেখ ও বিশ্ব রাজনীতি

স্যাটায়ার
লেখাটি শেয়ার করুন

মো: ফেরদৌস আলম,
শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

পল্লীকবি জসিম উদ্দীনের ‘রাখালী’ কাব্যগ্রন্থের কবিতা ‘মেনা শেখ’। মেনা শেখ একটি সমাজচরিত্র। সমাজে তার আধিপত্য আছে। শক্তিধর মেনা শেখের ভয়ে ভীত হলেও সমাজের মানুষ তাকে নিয়ে গর্ব করে। দশগ্রামে পরিচয় দেয় মেনা শেখের গ্রামের লোক বলে। কবি মেনা শেখের আধিপত্যবাদী চরিত্রের আড়ালে সমাজের ভারসাম্য রক্ষায় মেনা শেখের অবদান তুলে ধরেছেন। যদিও শক্তিশালী মেনা শেখকে কলমের শক্তির কাছে শেষ পর্যন্ত অসহায় হিসেবে তুলে ধরেছেন। কবি মেনা শেখের সমালোচকদের বলেছেন,
“একটি ভিটেয় চরছে ঘুঘু তাহার নাকি অত্যাচারে।
জানি আমি কলম-পেষা। এই নিয়ে আজ দুষছ তারে।
হাজার ভিটের চরত ঘুঘু সে না থাকলে মোদের গাঁয়ে,
হাজার চালের খসত ছানি তোমাদের ওই কলম ঘায়ে।”
(রাখালী, ১৯২৭)
মেনা শেখ চরিত্রকে আন্তর্জাতিক রূপ দেয়াই এ লেখার উদ্দেশ্য! আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ‘আধিপত্যবাদী স্থিতিশীলতা তত্ত্ব’ (হেজেমনিক স্ট্যাবিলিটি থিওরি) আলোচনা করা হয়। এ তত্ত্বানুযায়ী বিশ্ব রাজনীতিতে শক্তিধর কোনো দেশের আধিপত্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে। সাম্প্রতিক বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র এ ভূমিকা পালন করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিবাদী রাজনীতি বিশ্বকে প্রায়ই সংঘাতের মুখে ঠেলে দেয়। বর্তমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত এর একটি উদাহরণ হতে পারে। রাশিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের অনেকদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং শক্তিবাদী রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের যথার্থ শত্রু! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এ পর্যন্ত অনেক সংকটকাল এসেছে। দুটি বিশ্বযুদ্ধই আধিপত্যবাদের পটপরিবর্তনের এবং একই সাথে উদ্ধত শাসকদের পরিণতির ক্ষেত্র ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পারমাণবিক অস্ত্রপ্রয়োগ এমন উদ্ধত শাসকদের জন্য সতর্কবার্তা ছিল। হিটলার-মুসোলিনিদের অনুসারীদের জন্য, শক্তিকামী ইউরোপের জন্য অশনিসংকেত ছিল। জাতিসংঘ ও বিশ্ব শান্তি বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হলেও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ না হওয়ার পিছনে ‘আধিপত্যবাদী স্থিতিশীলতা  তত্ত্ব’ কাজ করেছে বলা যায়। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় না হোক, কম অশান্তি নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কিছুটা যুক্তিযুক্ত ছিল। সফলভাবে স্নায়ুযুদ্ধ শেষ করলেও বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যবাদ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেনা শেখ যেমন কলমের কাছে অসহায়, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রও কালের কলসের কাছে অসহায়। স্বার্থের প্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই কৌশলী। মেনা শেখ যেমন স্বার্থোদ্বারে কারো ভিটেয় ঘুঘু চরাতে ইতস্তত করে না, যুক্তরাষ্ট্রও তেমনি তেল বা অস্ত্র ব্যবসার জন্য বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে সংঘাত উস্কে দিতে দ্বিধা করে না। যতদিন আক্রান্ত না হই ততদিন আধিপত্যবাদী স্থিতিশীলতার প্রশংসায় জসিম উদ্দীনের ভাষায় বলতে হয়,
“মানি আমি, আছে তাহার অনেক রকম অত্যাচারও,

তবু সে কেন মোড়ল মোদের ভেবেছ কি কেউ একবারও?
খুন করিলে বুক দিয়ে সে আগে দাঁড়ায় খুনীর হয়ে,
চোর-ধরিবাজ সবার কুনাম লয় সে আপন মাথায় বয়ে।”

(রাখালী, ১৯২৭)


লেখাটি শেয়ার করুন

Leave a Reply