ইসরাত ভাবনা

এখন এবং তখন

কবিতা
লেখাটি শেয়ার করুন

ইসরাত ভাবনা

 

বৃষ্টি পরছে ভিজবো চল,
কিরে তোর চোখে জল?
কি হয়েছে? তোর ভাইটিকে বল না শুনি
এই পাগলী! আমি যে তোর বিয়ের দিন গুনি।
পাগলী বোন আমার! কাদিস না,
তোর হবু বর খুবই ভালো তুই কিচ্ছুটি ভাবিস না।
কথা বলবি না?এভাবেই মুখ ফিরিয়ে থাকবি?
আর কতো অভিমান বুকে জমিয়ে রাখবি?
কি রে? আমার সাথে এতো অভিমান?
তোর প্রেমিক যোগ্য না, রাখ এই বংশের সম্মান।
আচ্ছা তুই থাক তোর অভিমান মনে পুষে রেখে,
বিয়ের অনেক কাজ, আমি ছাড়া আর কেই বা এসব দেখে।
.
ভাই তো চলে গেলো, আমি কি করে যাই?
প্রিয় যে আমার পথ চেয়ে আছে,কি করি হায়!
পালিয়ে গেলে পরিবারের সম্মান শেষ,
পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিলে “মেয়ে গোছালো বেশ”।
প্রেমিক  রাস্তায় অপেক্ষারত আর আমার মনে ভয়,
পালিয়ে গেলে না জানি আমাদের পরিনাম কি হয়!
সময় গড়িয়ে যাচ্ছে দেখি একটু পরেই বিয়ে,
ভাই যে বড্ড খুশি আমার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে।
ভাইয়া বাহিরে গেলো, বাহিরে কিসের যেন হচ্ছে হৈচৈ
” মায়া মায়া, সুনীল তো মরেছে” বললো অথৈ!
আমি দিব্বি বসেই রইলাম বিয়ের আসরে
কান্না কি উবে গেলো আমার লোচন থেকে শহরে?
.
গাড়ি ছুটে চলছে বৃষ্টি হচ্ছে ঝুম,
পাশেই আমার স্বামী তার কি নিশ্চিন্তে ঘুম।
আমার বিদায় বেলায় ভাইয়ার সে কি চিৎকার আর কান্না।
 আমি শুধু সুনীলকে চেয়েছিলাম, না কি কোনো “হিরে-পান্না?”
ভাইয়া আমার দিকে শুধু তাকিয়ে ছিলো অপরাধী বেশে…
আমি কি আর করবো আমার বাবার বাড়ি এসে?
সুনীল-আর আমার প্রনয়ের ঘটনা সবার মুখেই রয়
সবাই এখন আমাকেই কালনাগিনী কয়!
স্বামীর ঘর, জায়গা-জমি, টাকা পয়সার অভাব নেই,
ভাই যখন সুধায় আমাকে আমি মিছেই জবাব দেই।
সবাই ভাবে আমি সুখেই আছি;দুঃখ আমায় ছোয় না
আমার নিজের বিবেক এখন আমার কথাই কয় না।
.
বোনটা আমার এখন আর আগের মতো হাসে না,
আগের সেই চঞ্চলতায় এখন আর সে বাচে না।
বোনটা আমার সুখে নেই বুঝি আমি বেশ
তিন টি জীবন নিজের হাতেই আমি করলাম শেষ!
না সুখে আছে আমার বোন, না তার স্বামী-স্বজন।
না শান্তিতে আছে সুনীলের পরিবার-পরিজন।
আমিও তো সুখে নেই গ্লানি আমায় কুরে কুরে খায়
অভাগা ঠিক কোথায় গেলে একটু শান্তি পায়?
বোনের কাছে মাফ চেয়েছি-আরও চেয়েছি সুনীলের পরিবারের কাছে ক্ষমা,
সময়ের চিরকুটে সকল কিছুই নাকি সর্বদা থাকে জমা?
তবে কি আমিও পেতে চলেছি আমার পাপের ফল?
এই সংসারে শুধু আর্তনাদ আর ভয়াবহ কোলাহল।
.
আমি অতীত ভুলেই গেছি, বর্তমানে সুখেও আছি বেশ…
শুধু মাঝেমধ্যে ভাবি সুনীলের স্মৃতির কি করে কাটলো রেষ!
মায়া বড় ভয়ংকর; তাই আমায় আটকে রেখেছে,
স্বামী নিয়ে আমি খুশি, সে আমার ভালো দিক সবসময় দেখেছে।
শাশুড়ী-ননদ সবাই যখন আমায় “নির্লজ্জ বেহায়া বলে”
স্বামীর মন আমার প্রতি সর্বদাই তখন গলে…
এভাবেই আজ পঁচিশ বছর কেটে গেলো সংসার  জীবনের!
ছেলের বয়স তেইশ হলো অথচ মনে হয় “এ কথা সেদিনের”।
ভাইটা আমার পাগল হয়েছে, শেকল বন্দী ঘরে
বউ ছেড়ে গিয়েছে কবেই..বাচ্চারা কেদে মরে।
প্রকৃতি তবে প্রতিশোধ খানা নিলো ভাইয়ার থেকে
আমি কি করে এতো সুখে আছি! সুনীলের মৃত্যু দেখে?
.
ছেলেটা আমার মনমরা রয়, মন নেই কোনো কাজে
এই বয়সী ছেলেমেয়েরা কথা বড্ড লুকায় পাছে।
কি হয়েছে যত জিজ্ঞেস করি উত্তর ” কিছু না”
বাবুর বাবা সুধায় বাবুকে “কি চাউ? বলো তা…”
ছেলেটা আমার কিছু বলেনা তবে বুঝি আমি ওর কষ্ট
প্রেমে পরেছে, কষ্ট পেয়েছে অথবা সম্পর্ক হয়েছে বুঝি নষ্ট!
একদিন হঠাৎ ঘুম ভেঙে শুনি ছেলেটা আমার গোঙাচ্ছে..
দরজাটা খুলে দেখি ফ্যানে ঝুলে আছে ছেলে আমার, প্রাণটা বুঝি যাচ্ছে।
দৌড়ে গিয়ে ধরি তার পায়ে, তাকে বাচানোর চেষ্টা…
এমনই অবস্থা সেদিন হয়েছিল আর পেয়েছিল এমন তেষ্টা।
পথিক তবুও পান করে পানি বুক ফাটা তেষ্টায়,
আমার সময় যায় শুধু চোখের জল আটকানোর প্রচেষ্টায়।
.
আজ নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে ; মনে হচ্ছে ভিষণ স্বার্থপর…
সুনীলের জন্য কাদতে পারিনি আমি -সে কি তবে ছিলো আমার পর?
প্রকৃতি প্রতিশোধ নিতে ভোলে না, তাই আমার ছেলের এই পরিনতি।
সেদিন সুনীলের সাথে পালিয়ে গেলে  অবশ্যই হতো কোনো না কোনো গতি!
ভুল করেছি আমি, তার ফল ভোগ করলো আমার ছেলে!
এমন প্রকৃতির খেলা এই নির্মম প্রকৃতি যেন কারোও সাথে না খেলে।
সেদিনও আমরা গাড়িতে ছিলাম সাথে বৃষ্টি ছিলো ঝুম…
আজও আমরা (এম্বুল্যান্স) গাড়িতে তবে আমার স্বামীর চোখে নেই ঘুম!
প্রকৃতি বদলায়নি পরিস্থিতি বদলায়নি শুধু বদলেছে গল্প-ঘটনা..
সেদিনের শুরু, মাঝে কতো দুরুদুরু  আজকে শেষ হলো সব রটনা।
বাসায় এসেছি, সব আগের মতই আছে – ছেলের রুমের আলোও জ্বলছে এখনও
স্বামী আমার ডুকরে কেদে বললো “আমি যেকোনো মুল্যে তোমাকে চেয়েছিলাম তখনও




লেখাটি শেয়ার করুন

Leave a Reply