নাজমুল হাসান সাগর

কবিকে ভালোবেসো না

কবিতা
লেখাটি শেয়ার করুন

নাজমুল হাসান সাগর।।

 

কবিকে ছেড়ে যাও,কবিকে কষ্ট দাও।
কষ্ট আর ছেড়ে যাওয়ার প্রতিবাদে বড় জোর কবি একটা কবিতা লিখবে।
সেখানে ছেড়ে যাওয়া প্রেমিকা জন্ম নেবে নতুন করে চাঁদনী নামে।
কবিরা যতটুকু প্রেমিক ঠিক ততটুকুই মানবিক।
কলম ফেলে কখনই হাতে তুলে নেবে না চাপাতি।
নতুন করে জন্মাবেনা খাদিজা নামধারী কোন প্রেমিকার।

বেলকুনি সাজাবে বলে
তোমার আবদারের বনসাই দিতে না পারুক,তবুও চাও।
কবি তোমায়,ফুলে ফুলে ছেয়ে যাওয়া একটি দুলপি ফুলের গাছ দেবে,সদ্য উঠিয়ে আনা মাটির গন্ধ সমেত।
দিতে না পারুক
তুমি একটি বিদেশী লাভ বার্ড চাও।
খাঁচায় রেখে ভালোবাসবে বলে।
ভিনভাষী ভালোবাসার পাখি না হোক অন্তত একটি ঘাস ফড়িং তুমি পাবে।
যেটা তোমার সাথে খেলা করবে বিস্তীর্ণ সবুজ ঘাসের মাঠ ছেড়ে তোমার সুগন্ধি চুল আর ওড়নার আঁচলের ভাজে ভাজে।
দেশীয় ভালোবাসায়,দেশীয় ঢং নিয়ে।

কবি না হয়ে চাকুরে হলে তুমি হয়তো পাবে।
বিশাল এক টেডি বিয়ার,হাত ভারি করা হীরের আংটি কিংবা এ্যাকুরিয়াম ভরতি গাপ্পি আর সুপার শপের পারফিউম মাখা গোলাপ।

কিন্তু হারাবে
এক একটি চাঁদনী রাত,রোদ্র ঝলমলে বিকেল আর মিষ্টি সকাল।
ফ্লাটের দামী দরজার ওপাশে,জানালায় লাগানো বেলজিয়াম গ্লাসের অহংকারী প্রতিরক্ষায়।

কবিকে অবজ্ঞা কর,কবিকে ভুলে যাও।
এই শোকে কবি তোমাকে নিয়ে একটি কবিতা লেখবে।
যেখানে তুমি চরম বাস্তববাদী আর ভীষণ রকমের ক্যারিয়ারিস্ট।
হয়তো কবিতায় কবি বোঝাতে চাইবে তোমায়।
দেশীয় শরীর আর বিদেশী মস্তিস্কে ভালোবাসার সমন্বয়টা ঠিক করতে পারো নাই তুমি।
এইতো শুধু এতটুকুই এর বেশি কিছু না।

কবিরা পাল্টা আঘাত করে
নদীর জল,সুর্যের তাপ,আকাশের রং আর বাতাসের গন্ধকে উপমা করে।
কোন গল্প ফাঁদে না।
যেখানে অশ্লিলতা উপচে পরে,ঘৃণার বাষ্প উড়ে আর ক্ষোভের আগুন জ্বলে।

কবিকে ভালোবেসো না।
কবি কোন জীবন্ত কর্পোরেট ফার্ণিচার নয়।
চিকচিকে চামড়ায় কবি কখনো শোভা বর্ধন করে না কোন বানিজ্যিক চুক্তিতে অথবা আর্থিক লাভজনক সভায় পেপসোডেন্ট হাসি নিয়ে।

বরং কবিকে মেরে ফ্যালো বিরহের নীল বিষে।
তবেই তুমি একটা ভবিষ্যৎ পাবে।
যেখানে আর্থিক সচ্ছলতা পাবে,
নিজস্ব ভোর,সকাল,বিকেল আর চাঁদনী রাতগুলোর বিনিময়ে।
ক্লাস বেইজ ইমপোর্ট ভালোবাসা পাবে দেশীয় মনে।
পাবে আপন মাথার ধার করা মস্তিস্কে শান্তনার কর্পুর।

কবিকে ছেড়ে যাও নির্দ্বিধায়
কবি তোমায় অভিশাপ দেবে না, অমঙ্গল চাইবে না।
কবিরা যতটুকু বিরহে পুড়তে পারে তার থেকে বেশি ভালোবাসতে জানে।

তাই হয়তো হাত মাখে
অক্ষরের কালির রঙ্গে।
রক্ত বা শেষ ঘৃণার কামুক রসে নয়।
কবিকে ভালোবেসো না।



লেখাটি শেয়ার করুন

One thought on “কবিকে ভালোবেসো না

Leave a Reply