বোরকা
শাহাবুদ্দিন বিজয়।।
ঢ্যাপঢ্যাপ চোখে জায়িন সামনে থাকা মহিলাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আশ্চর্য, মহিলাগুলো বোরকা পড়ে আছে। আবার ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে আসা-যাওয়া করা লোকজনের সঙ্গে কথাও বলছে। জায়িন কিছু বুঝতে পারছে না। মহিলাগুলো পর্দা করেছে আবার পরপুরুষের সাথে কথাও বলছে। এ কেমন ব্যাপার!
জায়িনের এভাবে তাকানো দেখে আলিফ বলল, “ঐ, ওডির দিকে তাকায়া আছস কেন? চোখ ফিরা। নাইলে কাছে আইয়া আবার রেট কইব।” এটা শুনে জায়িন বলল, “রেট বলবে মানে?” আলিফ একটা বিদঘুটে হাসি দিয়ে বলল, “ঐডি পাড়ার নটি বেটি।” জায়িন একটু অবাক সুরে বলল, “পাড়ার নটি বেটি আবার কী?” এটা শুনে আলিফ হো হো করে হাসলো। এরপর বলল, “শালা, এই বয়সে গাঞ্জা খাওয়া হিকছ, আর নটি বেটি চিনো না? ওডি বেশ্যা, পাড়ার বেশ্যা।”
কপালের ভাঁজ ছেড়ে জায়িন বলল, “সেটা আগে বলবি তো। কিন্তু উনারা তো পর্দা করেছে। ধর্মীয় কাজ! আমি পর্দানশিন কোনো প্রস্টিটিউট দেখিনি। এমনও হয়?” আলিফ বলল, “তুমি মালে থাকছ বিলাতে, ঐখানে এইসব নাই। এই দেশে এমন পাইবা। উপর দিয়া ফিটফাট, নিচ দিয়া দৌলতদিয়া ঘাট! দেখতে মনে হইব বিরাট ধার্মিক, কিন্তু টাহা দিলে চেগায়া যাইব!”
শুনে জায়িন বলল, “‘চেগায়া’ এর মানে কী?” আলিফ একটু বিরক্ত হয়ে ইশারায় দু’পা মেলে ধরা বুঝিয়ে দিলো। এরপর বলল, “ঐ যে মাল লইয়া আইছে। তুই দাড়া। একবারে সাড়ে বারো গ্রাম নিয়াহি।” এরপর আলিফ সামনে থেকে এগিয়ে আসা এক যুবকের কাছ থেকে কাগজে মোড়ানো পুটলি নিলো। কিছু টাকা দিয়ে ফার্মগেট ফুটওভার ব্রীজ থেকে নিচে নামলো। আলিফের বাসা পূর্ব রাজাবাজার। ওখানেই যাবে। জায়িন উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে পড়াশোনার জন্য বিদেশ চলে গিয়েছিলো। বছর দুয়েক পর দেশে ফিরেছে। ক’দিন নিজেদের মিরপুরের বাসায় থেকে এখন এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে।
আলিফ জায়িনের কলেজ ফ্রেন্ড। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তভুক্ত একটা কলেজের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। জায়িন কিছুদিন আলিফের বাসায় থাকবে। বিকেলে বের হয়েছিলো গাঁজা কেনার জন্য। আমেরিকায় জায়িন নিয়মিত গাঁজা সেবন করে। সেখানে তেমন সমস্যা হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে ঝামেলা। একারণে আলিফের বাসায় এসেছে। এখানে ক’দিন থেকে আবার বাসায় চলে যাবে।
আনন্দ সিনেমা হলের সামনে থেকে রিকশা নিয়ে জায়িন আর আলিফ পূর্ব রাজাবাজার আসলো। বাসায় ঢুকে দুজন ফ্রেশ হয়ে নিলো। এরপর গাঁজার রোল বানানো শুরু করলো। এ কাজে আলিফ বেশ পটু। গাঁজার রোল বানানো আলিফের কাছে শিল্প মনে হয়। তাই সময় নিয়ে এ কাজটা করে। কাজ শেষ হলে জায়িন গাঁজা জ্বালালো। কয়েকটা টান দিয়ে আলিফকে দিলো। এভাবে বারকয়েক দু’জন গাঁজা টানলো। জায়িনের পা থেকে মাথা অব্দি একটা ঢেউ খেলে গেল। জায়িন বিছানায় শুয়ে পরলো। গাঁজা খেলে জায়িন ভালো চিন্তা করতে পারে। একদিকে মনোযোগ দেওয়া যায়।
এভাবে কিছুক্ষণ গেলো। জায়িন মাথায় এখনও একটা ব্যাপার ঘুরপাক খাচ্ছে। ফার্মগেট ফুটওভার ব্রিজের সেই বেশ্যারা। নীল, কালো আর মেরুন রঙের বোরকা পরিহিত বেশ্যা। তারা ধর্মের জন্য বোরকা পড়ে না। শুধু নিজেদের মুখ ঢেকে রাখতে এ ব্যবস্থা অথবা অন্য কোনো কারণ। তাদের এ পর্দার ধর্মীয় কোনো মূল্য নেই।
দু‘বছর বিদেশে থাকলেও জায়িন দেশের খবর রাখত। চুরি-বাটপারি, ঘুষ, দুর্নীতি, ধর্ষণ আর অনিয়মে ভরপুর পুরো দেশ। এদেশের মানুষও ধর্ম পালন করে। আসলে পালন করে না, সুবিধা অনুযায়ী ব্যবহার করে। ঐ বেশ্যাদের মতো। এদেশের অনেক মানুষই নীল, কালো আর মেরুন রঙের বোরকা পরিহিত বেশ্যা।
One thought on “বোরকা”
বেশ ভালো লেখা