Arman Hossain Antor

ভীষণ রকমের কম পড়ুয়া মানুষ আমি: অন্তর

সাক্ষাৎকার
লেখাটি শেয়ার করুন

দূর্বাঘাস আয়োজিত সাক্ষাৎকার পর্বে আমাদের অতিথি ছিলেন তরুণ কথা সাহিত্যিক আরমান হোসেন অন্তর। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দূর্বাঘাসের সহ-সম্পাদক লিজা

“প্রিয় লেখক, দূর্বাঘাস কর্তৃক আয়োজিত আড্ডায় আপনাকে স্বাগতম। আমি লিজা, দূর্বাঘাসে সহ সম্পাদক হিসেবে কাজ করছি। দূর্বাঘাস সবসময়ই অনলাইন ভিত্তিক সাহিত্যচর্চাকে সহজ করে তোলার জন্য যা যা সমর্থন অথবা সহায়তা প্রদান করা সম্ভব তা সহজলভ্য করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে আমাদের আজকের এই আড্ডার আয়োজন, আমরা চাই আড্ডার ছলে আপনার চিন্তা-আদর্শ-দর্শন এসবের সাথে একটু পরিচিত হতে। তো চলুন, সময় নষ্ট না করে শুরু করা যাক।

প্রশ্ন: প্রথমেই সেই একই গৎবাঁধা প্রশ্ন দিয়ে শুরু করছি, কেমন আছেন?

উত্তর: সবসময় ভালো থাকি। আপনি কেমন আছেন?

প্রশ্ন: আমিও আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। প্রথমেই আপনার জন্ম, বেড়ে ওঠা কোথায় এবং কিভাবে? এ সম্পর্কে আমাদের পাঠকদেরকে যদি জানাতেন।

উত্তর: আমার ধারণা, মানুষ স্বভাবতই অন্যের কাছে নিজেকে তুলে ধরতে, প্রকাশ করতে মুখিয়ে থাকে। সে হিসেবে পাঠকদের জানাতে পারা নিঃসন্দেহে ভালো লাগার ব্যাপার। আমার জন্মস্থান নির্দিষ্ট করে বললে ঢাকার মিরপুরে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হাতেখড়িও ওখানেই। পরবর্তীতে গ্রামে বেড়ে ওঠা। মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলা কয়ারিয়া ইউনিয়নে। কয়ারিয়ায় প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ‘সরকারি গৌরনদী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ’ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছি। অতঃপর উচ্চ শিক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ থেকে বি.এ. করেছি।

প্রশ্ন: লেখালেখির জগতে আসা কিভাবে? ঠিক কী কী বিষয় আপনার লেখকসত্ত্বাকে আবিষ্কার করতে সাহায্য করেছে কিংবা বলা যায় প্রভাব ফেলেছে?

উত্তর: প্রথমে যদিও ভালো লাগা থেকে লেখালেখির শুরু। তবে পরবর্তীতে জীবনবোধ কিংবা দায়িত্ববোধ থেকে লেখা বলা চলে। বলতে পারেন লেখালেখি বা সাহিত্যে দায়িত্ব কোথায়। আমি বলবো পাঠকের কাছে লেখকের দায়, সাহিত্যের প্রতি দায় কিংবা সাহিত্য ও পাঠক সমাজের নিকট সৃজনশীল, মননশীল সাহিত্য তুলে ধরার দায়।

আমার মতে প্রত্যেকের ভেতরেই লেখক সত্ত্বা রয়েছে। লেখার ক্ষেত্রে সে সত্ত্বাকে বিকশিত করার উপযুক্ত পরিবেশের প্রয়োজন হয়। একইসাথে প্রয়োজন হয় জীবনকে ঘনিষ্ঠভাবে উপলব্ধি করা। তবে আমার ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিকতা ও দায়িত্ববোধ আমার লেখালেখিতে সাহায্য করেছে। কিন্তু লেখালেখি কিংবা সাহিত্যে জীবনবোধকে আমি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে ও সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে দেখি।

প্রশ্ন: আপনার প্রথম বইটি সম্পর্কে আমাদের পাঠকদের একটু বলেন। বইয়ের জনরা, বইয়ের পটভূমি ইত্যাদি?

উত্তর: প্রথম বই ‘অন্তরালে’। এটি একটি পত্রোপন্যাস। পত্রোপন্যাস বা পত্র উপন্যাস হলো ধারাবাহিকভাবে লিখিত চিঠি বা পত্রের আকারে লেখা একটি উপন্যাস। পত্রোপন্যাস বাংলা সাহিত্যের অন্যতম একটি জনপ্রিয় শাখা হলেও এ শাখায় খুব বেশি লেখা পাওয়া যায় না। তবে আমার প্রথম উপন্যাস সম্পর্কে বলতে গেলে খুব একটা ভেবেচিন্তে যে পত্রোপন্যাস লিখিনি, একথা অকপটেই বলবো।



পটভূমি নিয়ে সত্যিকার অর্থে খুব বেশি কিছু বলার নেই। আগেই বলেছি বইটি তেমন গবেষণা অথবা নিখুঁত বিন্যাসে লেখা নয়। সে হিসেবে পটভূমিতে আমার ইচ্ছাশক্তিকে প্রাধান্য দিব। সাহিত্য কিংবা পাঠক সমাজকে নতুন কিছু দেয়ার ইচ্ছে থেকেই মূলত আমার প্রথম উপন্যাস লেখা বলা চলে।

তবে এই বই সম্পর্কে বললে প্রথমেই বলবো, ‘অন্তরালে’ এক টুকরো নিখাঁদ আবেগ। অনেককেই বলতে শুনেছি বই তাদের সন্তানের মতো। সন্তানের অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি না থাকলেও বলতে পারি প্রথম বইটি আমাকে নিজের মতো ভাবাতে কিংবা নিজেকে আবিষ্কার করতে সাহায্য করেছে। একইসাথে আমাকে নতুন পরিচয়ও দিয়েছে বলা যায়। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, অপরিকল্পিত রচনা হলেও তিনটি বইয়ের মধ্যে ‘অন্তরালে’ বইটিকেই আমার শ্রেষ্ঠ রচনা বলবো।

প্রশ্ন: বইটি আমার পড়া হয়েছে। আমার বেশ ভালো লেগেছে। আচ্ছা, লিখতে যেয়ে মজার কেনো ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন কিংবা এমন কোনো প্রেক্ষাপট থাকলে তা যদি পাঠকদের সঙ্গে শেয়ার করতে চান?

উত্তর: নাহ। এমনিতেই আমি ভুলো মনা। এমন কিছু থাকলেও এখন মনে নেই।

প্রশ্ন: আচ্ছা। পাঠকরা কি সামনে কোনো বই পাচ্ছে তাহলে? আপনার পাঠকরা তো অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছে জানার জন্য।

উত্তর: ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলা কঠিন। আমার চেষ্টা আছে। সময়, সুযোগ, পরিবেশ, পরিস্থিতির উপরে নির্ভর করছে। একইসাথে চমকে দিতে আমি পছন্দ করি। সেটা হোক লেখা কিংবা বাস্তব জীবনে, সবখানেই…।

প্রশ্ন: বাহ্!! লেখালেখির ক্ষেত্রে কোন বিষয়টি আপনাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দেয়?

উত্তর: আমার শুরু থেকে শেষ যেকোনো ক্ষেত্রে একমাত্র অনুপ্রেরণা আমার আম্মা। নতুন করে কিংবা আলাদা করে অনুপ্রেরণা নাই।

প্রশ্ন: আপনার প্রিয় লেখক কে কিংবা কোন কোন লেখকের লেখা বেশি ভালো লাগে? আপনার লেখার ক্ষেত্রে কোনো লেখকের লেখা প্রভাবিত করে কি না?

উত্তর: ভীষণ রকমের কম পড়ুয়া মানুষ আমি। হাতেগোনা যে ক’জনের লেখা পড়েছি তার মধ্যে কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ভালো লাগে। যদিও পাঠক ভালো বলতে পারবে। খুব সম্ভবত কাজী নজরুল ইসলাম থেকে কিছু প্রভাবিত হই।

প্রশ্ন: পাঁচ বছর পর নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চান?

উত্তর: বেঁচে থাকতে চাই..।

প্রশ্ন: লেখালেখি নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?

উত্তর: সময় এবং পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল। বাকিটুকু পাঠক সমাজ নির্ধারণ করবেন।

প্রশ্ন: যারা লেখক হতে চান, তাদেরকে কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে বলে আপনি মনে করেন?

উত্তর: না না। যতটুকু জানি, লেখক হতে এখনো পর্যন্ত কোনো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয় না। সেক্ষেত্রে প্রস্তুতি না। আর লেখক আসলে বলে কয়েও হওয়ার বিষয় না। তবে কেউ লিখতে চাইলে তার জন্য তার চারপাশ সম্পর্কে অনুভূতি ও উপলব্ধিগুলো জোড়ালো ভূমিকা পালন করবে বলে আমার ধারণা।

প্রশ্ন: মনুষ্যত্বের বিকাশের ক্ষেত্রে সাহিত্য কতটুকু ভূমিকা পালন করে বলে আপনি মনে করেন?

উত্তর: অবশ্যই মনুষ্যত্বের বিকাশে সাহিত্যের ভূমিকা আছে। তবে সেক্ষেত্রে সঠিকভাবে সাহিত্যের রস, রুপ উপলব্ধি, অনুধাবন করার ক্ষমতা থাকা জরুরি।

প্রশ্ন: লেখার ক্ষেত্রে আপনি পাঠক চাহিদাকে বেশি প্রাধান্য দেন নাকি নিজের চিন্তাকে?

উত্তর: অবশ্যই নিজের ভাবনাকে। আমাদের একটা দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা জরুরি— তা হলো লেখক কিংবা পাঠক, কারোরই মেধা বা ভাবনা যাতে নিয়ন্ত্রিত না হয়।

প্রশ্ন: বই প্রকাশ করতে যেয়ে আপনাকে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছে কি?

উত্তর: প্রতিবন্ধকতা বলতে বই প্রকাশের প্রথম দিকে সবাই যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় আরকি। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম কিছু না। তবে সমস্যাটি সরাসরি বলছি না।

প্রশ্ন: আমরা আড্ডার একদম শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি।শেষ করার আগে আমরা আপনার মুখ থেকে দূর্বাঘাস এবং দূর্বাঘাসের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে দু-একটা কথা শুনতে চাইবো।

উত্তর: দূর্বাঘাসের পথচলার শুরু থেকে আমি সাথে আছি। তাই দূর্বাঘাসের কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা আছে। দূর্বাঘাস নিয়ে বেশি কিছু বলতে যাবো না বা কতটুকু বলতে পারবো তাও জানি না। শুধু বলবো, যারা নতুন লিখতে চায় বা সম্ভাবনাময় লেখকদের জন্য দূর্বাঘাস নিঃসন্দেহে ভালো প্লাটফর্ম। এখনকার সময়ে উৎসাহই বড় অনুপ্রেরণা। যেটা দূর্বাঘাস বেশ সফলতার সাথে করে আসছে। দূর্বাঘাসের জন্য শুভকামনা থাকবে সবসময়।

লিজা: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে,আপনার মূল্যবান সময় থেকে আমাদেরকে কিছুটা সময় ধার দেওয়ার জন্য।ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আবার হয়তো দেখা হবে অন্য কোনো আড্ডায়..ততদিন পর্যন্ত বিদায়।

আরমান: ধন্যবাদ আপনাকে। সবসময় ভালো থাকবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন।”


লেখাটি শেয়ার করুন

One thought on “ভীষণ রকমের কম পড়ুয়া মানুষ আমি: অন্তর

Leave a Reply