মিলনের পথে 4, 5

মিলনের পথে: চতুর্থ ও পঞ্চম পর্ব

উপন্যাস
লেখাটি শেয়ার করুন

সুদীপ ঘোষাল,
পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ।

 

চার

আজ অরিন্দম বাড়িতে মা বাবাকে বলে গোপাল বাবুর গােপালবাবুকে আজ আশেপাশের পাঁচ ছয়টি গ্রাম থেকে একজন করে বা দুজন করে। নিয়ে আর নিজের গ্রাম থেকে আটজন অভিনেতাকে নিয়ে একটি বই মঞ্চস্থ করার। মনস্থ করলেন। তার জন্য তো মহড়ার প্রয়োজন। সেই মহড়ার শুরু আজ থেকে। গোপালবাবুর সেই পুরানো দিনের বাড়ি। বাড়ি বললে ভুল হবে। যেন এক বিরাট প্রাসাদ। সেই প্রাসাদের সম্মুখে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। হয়ত এটা পূর্বের জমিদার বাড়ির সভাকক্ষ ছিল । গােপালবাবু একজন শিল্পী।তিনি সেই স্থানটিতেই মহড়ার বন্দোবস্ত করলেন।

অেক জমায়েত ধনী ব্যক্তির। মহড়া দেবার স্থান নির্বাচিত হল সেই স্থানটিতেই হয়েছিল। যাদের ডাকা হয়েছিল তারা সকলের সম্মতিক্রমে ঠিক হলাে মহড়া দেবার কথাটি। প্রথমে নির্বাচন হল কোন বইটা মঞ্চস্থ করা যাবে। সর্বসম্মতিক্রমে ভবেশ ভট্টাচার্যের ‘দিন দিন প্রতিদিন’ সামাজিক পালাটি  ঠিক হলো । মোটামুটি সকলেই জানে, অভয়পুরের সুদর্শন সান্যালের নাম অভিনয় জগতে মােটামুটি সকলে অভিনয় দেখে। তারা গােপালবাবু আর সুদর্শনকেই চেনে বেশি। তাছাড়া মহড়ায় সুদর্শনের সন্তোষজনক অভিনয় দেখে, গােপাল বাবু নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করতে বলেছিলেন। গােপালবাবু নিজেও একটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।  বাইরের শহর থেকে এসেছিলেন চারজন অভিনেত্রী।



অরিন্দম একজন বেকার ছেলের চরিত্রে ছিল। যাত্রাগান অনুষ্ঠিত হওয়ার রাত্রিতে একটু তাড়াতাড়ি বেরিয়ে ছিল অরিন্দম। তার সকল রকম দরকারী জিনিসপত্র নিয়ে। উপস্থিত হলাে একদম গ্রীণ রুমে। গিয়ে দেখে গােপালবাবু ও শহরের অভিনেত্রীরা এবং সাজঘরের লােকেরা প্রত্যেকেই সময়মতাে উপস্থিত হয়েছেন। ধীরে ধীরে সকলেই এলাে। তারপর শুরু হলাে ‘মেক আপ। এদিকে দেবীকা বায়না ধরেছে শােভনের সঙ্গে সেও যাত্রা দেখতে যাবে। শােভন আমি এসে গেছি বলে প্রবেশ করলাে অশােক। শােভন জিজ্ঞাসা করলাে কি রেঅপর্ণাকে নিয়ে এলি না কেন?ওরা তিনজনে দেবীকা, শােভন আর অপর্ণা বেেিরয় পড়লাে যাত্রা দেখার জন্য। যাত্রাটি হচ্ছে গােপালবাবুর বাড়ির একটু দূরে যে  জায়গাটি পড়ে আছে সেখানেই।

 

পাঁচ

অভিনয় সকলেরই ভালাে হয়েছে। প্রত্যেক গ্রামের অভিজ্ঞ লােকেরা সকলের। অভিনয়ের প্রশংসায় মুখর। কিন্তু সকলের উর্ধ্বে যেন অরিন্দম। অরিন্দম একা,ছেলের চরিত্রে যা অভিনয় করে গেল তা সত্যি সকলের মনে দাগ  রেখে গেল। পরের দিন সকালে অরিন্দম দেখে তরুণ যুবকেরা তাকে গুরু বলছে। তপন বলল, গুরু পায়ের ধুলো দাও।

অরিন্দম বাড়িতে মা বাবাকে বলে গোপাল বাবুর বাড়ি গেল।  গােপালবাবু আজ আশেপাশের পাঁচ ছয়টি গ্রাম থেকে একজন করে বা দুজন করে নিয়ে, আর নিজের গ্রাম থেকে আটজন অভিনেতাকে নিয়ে একটি বই মঞ্চস্থ করার মনস্থ করলেন। তার জন্য তো মহড়ার প্রয়োজন। সেই মহড়ার কাজ  শুরু আজ থেকে। গোপালবাবুর সেই পুরানো দিনের বাড়ি। বাড়ি বললে ভুল হবে। যেন এক বিরাট প্রাসাদ। সেই প্রাসাদের সম্মুখে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। হয়ত এটা পূর্বের জমিদার বাড়ির সভাকক্ষ ছিল । গােপালবাবু একজন সেই স্থানটিতেই। সেখানে জমায়েত ধনী ব্যক্তি। মহড়া দেবার স্থান নির্বাচিত হল। সেই স্থানটিতেই ডাকা  হয়েছিল। যাদের ডাকা হয়েছিল তারা এলেন। অরিন্দদমের মনে কিন্তু একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে। গতকল রাত্রিতে অভিনয় করার সময় সে শুধু একটি দিকেই মনপ্রাণ রেখেছিল। সেখানে বসেছিলাে এক সুন্দরী তরুণী।



অরিন্দম লক্ষ্য করেছিল তার সেই দুটি চোখ যেন কি অপরিসীম ব্যথায় জর্জরিত। যাত্রার শেষে অরিন্দম লক্ষ্য করেছিল সেই তরুণী শেষে গোপালবাবুর সঙ্গেই ঘরে ফিরেছিল। অরিন্দম  আজ যেন তার সন্ধানে ব্যাকুল। সেইজনা সে চা খেয়েই বৌদিকে বলে ঘর থেকে বেরিয়েছে। বৌদি বলেছেন, দেখ ঠাকুরপাে, তোমাকে প্রকৃতিস্থ মনে হচ্ছে না। অরিন্দম ভাবে মেয়েদের চরিত্র কি বিচিত্র। পুরুষদের মনের কথা। তারা যেন দেশের চিত্রের মতো দেখতে পায়। | লেবু বাইরে দাড়িয়ে কিছু লােকের সাথে কথা বলছিলেন। প্রসঙ্গ সেই যাত্রাগান। গোপালবাবু অরিন্দমকে দেখে বললেন, আমার, তোমার সঙ্গে একটা দরকারী কথা আছে। তুমি একটু ঘরে বসো। অরিন্দম ঘরে বসে আর ভাবে কোথায় সেই তরুণীটি।

এখানে তাে থাকে না। তাহলে থাকে কোথায়? অরিন্দমের হঠাৎ চোখে পড়ল ঘরটি বেশ সুন্দর ভাবে গােছানাে। সামনেই একটি রাধাকৃষ্ণের ফটো। তার পাশে মা কালি। দু চারটি মহাপুরুষদের বড় বড় বাঁধানাে চিত্র। মনে হল এটা গােপালবাবুর শােবার ঘর। খাটের পাশে টেবিলের উপর কতকগুলি মােটা আর একটি বাঁধানাে ফটো। ফটোটা হাতে নিয়ে অরিন্দম দেখলাে এই তো সেই তরুণীটি। শোভনের কলেজে আজ বাৎসরিক অনুষ্ঠানের প্রথম দিন। আজ মমতা শংকরের নাচের প্রোগ্রাম। বাড়তি একটা কার্ড শােভন সংগ্রহ করেছিলাে, বন্ধু বান্ধবদের বলে। বলা যায় না কেউ তাে বায়না ধরতে পারে এই ভেবে। এই কলেজে পড়ে শােভন, অশোক আর অপর্ণা।আগেই বলেছি শােভন অশােক সেকেন্ড  ইয়ার বি.এ. আর অপর্ণা ক্লাস টুয়েলভ এ |

অপর্ণাও দুটি কার্ড জোগাড় করেছে। সে মনস্থ করেছে তার বান্ধবী বীথিকাকে সঙ্গে নেবে।। বীথিকরা সােনাদিঘিতে  থাকতাে না। যদিও তার জন্মস্থান এই গ্রাম | তারা থাকতাে লিলুয়ায়। আর গ্রামে থাকতেন তার কাকা। কাকা মারা যাওয়ার পর বীথিকার বাবা চাকরী ছেড়ে দিয়ে এই গ্রামেই এসেছেন। বর্তমানে বীথিকা তার বাবা আর আর মা এখানে থাকেন আর বড় দাদা ব্যাঙ্কে চাকরী করেন। বীথিকার বাবা অরুণ মুখার্জী আর মা রেবা দেবী। কলেজে গেছে শােভন, অশােক আর দেবীকা। অন্যদিকে অপর্ণা আর বীথিকা। অপর্ণা দেবীকাকে দেখেই বলে উঠলাে, আরে দেবী তােমার সাথে অনেকদিন দেখা হয়নি, এসাে এসাে এইদিকে বসি। শােভন আর অশােকের সুবিধাই হল।



লেখাটি শেয়ার করুন

Leave a Reply