মিলনের পথে ২

মিলনের পথে: দ্বিতীয় পর্ব

উপন্যাস
লেখাটি শেয়ার করুন

সুদীপ ঘোষাল,
পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ।

 

সুন্দর চরিত্রের দাদা বৌদি আর দেব-দেবী পিতা মাতাকে ছেড়ে কোথাও পালিয়ে যেতে ইচ্ছাও করে না শােভনের। শােভন যাচ্ছিল সােনা-দিঘি গ্রাম, তাদের গ্রামের পাশেই গ্রাম। এক মাইল দূরত্ব। সেখানে থাকে তার এক অন্তরঙ্গ কাকু অশােক। অশােকের মা বাবা সবাই আছে আর আছে এক বােন নাম অপর্ণা। সুন্দরী, তন্বী মেয়ে। অতি ভদ্র, লেখাপড়ার দিক থেকে খুবই ভালাে। অশােক বেশিরভাগ সময়ে  শােভনের কাছে আসে, কিন্তু মাঝে মধ্যে তাে বন্ধুর বাড়ী যেতে হয় এই বলে শােভন তাদের বাড়ী যায়। শােভনের যাবার আরও একটি কারণ ছিল। তার হল অশােকের বাবার আন্তরিকতার আকর্ষণ। পদ্মপুকুরের পাড় ঘুরতেই একটা মিষ্টি কণ্ঠের আওয়াজ শােভনের এলাে।

এই শােভনদা, যাচ্ছেন কোথায় আরে আরে এইদিকে তাকান, শােভন ঘুরে দেখে অপর্ণা সঙ্গে আর একটি মেয়ে। শােভন তাকে চেনে না। শােভনের অত পর্যবেক্ষণ করারও কোন প্রয়ােজন ছিল না বলে অপর্ণাকে বলল, “তােমাদের বাড়িতেই যাচ্ছিলাম, অশােক ধরে আনল। “হ্যাঁ” ছােট্ট একটি উত্তর দিয়েই অপর্ণা বান্ধবীর সাথে কথা বলতে শুরু করল। শােভনও আপন পথে পা বাড়ালাে। দেবীকার সঙ্গে অপর্ণার হয়তাে কোন পরিচয় নেই। একদিন পরিচয় করিয়ে দিতে হবে চিন্তা করে শােভন একটি গান ধরলাে। অশােকের নাম ধরে ডাকতেই সে বেরিয়ে এলাে একটি কলম হাতে। দীর্ঘকায়, সুঠাম সবল একুশ বৎসরের এক যুবক অশােক। মুখে চাপ দাড়ি আর সুন্দর তার মুখের গড়ন।  সম্পাদক হয়ে ঝামেলার অন্ত নেই মাইরি। এইমাত্র একটা রবীন্দ্রনাথের ছবি আঁকা শুরু করেছি, আর কে কি আবৃত্তি করবে, কে গান করবে এইসব ঠিক করে নিই।প্রোগ্রাম  তৈরী করছিলাম আর কি। অশোকের বাবা মৃন্ময় মুখোপাধ্যায় মহাশয়কে ধারে ধীরে তাদের দিকে আসতে দেখে দুই বন্ধু চুপ করে গেল। মৃন্ময় বাবু বলে উঠলেন, কি শোভন কেমন আছে? পড়াশুনা কেমন চলছে?শােভন তাড়াতাড়ি উঠে মৃণ্ময়বাবুকে প্রণাম করে বললাে, চলে যাচ্ছে কাকাবাবু একরকম। আর এবার তাে আমার সেকেণ্ড ইয়ার হল।



-হ্যাঁ তুমি আর অশােক তবে দুজনেই বি.এ. সেকেণ্ড ইয়ারে পড়াে। তবে কি জানাে পাশ কোর্সে পড়ে। এখন আর কোন কাজ হচ্ছে না শোভন। শােভন মৃম্ময়বাবুর কথায় সম্মতি জানিয়ে অন্য প্রসঙ্গ টানলাে। বললাে, কাকাবাবু এখন অপর্ণার শরীর কেমন? মৃন্ময় বাবু বললেন, তােমার বাবার থেকে আমি আট বছরের ছােট। তাও দেখ আমার শরীরের অবস্থা। এজমা রোগী। এখনই ভালাে, তখনই মন্দ। যাহােক তােমর তাহলে গল্প করাে আমি একটু ঘুরে আসি। আর, তুমি এখন আমাদের এখানে বড় একটা আসাে না তাে? আসবে, আসবে তােমার সাথে কথা বলে  শান্তি হয়।  এইকটু কথা বলতে বলতে তিনি বেরিয়ে গেলেন।

– তারপর তুই কি করছিস বল? বলে অশােক ভালাে করে বসলো। অশােক ভালাে করে বসলাে। কিন্তু শােভন  বলে, চল রাস্তায় খেতে খেতে বলা যাবে, পাঁচটা বাজে। অগত্যা  শোভনের কথায় রাজি হল। শোভন বলল, যাবার সময় কাকীমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো। আর আপনাকে বললাম তোমাকে একদিন আমার বোনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেব।  অনিল আজ  অপর্ণাকে বললাে, আরে মশাই দেবীকা হচ্ছে আমার প্রিয় বান্ধবী। অরিন্দম দুপুরটা অভিনয় আর আবৃত্তির চর্চা করে কাটিয়ে দিলাে। চারটি ঘরের মধ্যে, একটি ঘর নিজের মতাে করে সাজিয়ে নিয়েছে এবং তা ব্যবহার করে। শুধুমাত্র কিছু সময় দিয়ে সে শুধু নিজের সাধনা চালিয়ে যায়। যতরকম অভিনয় সংক্রান্ত উপদেশমূলক বই আছে তার কোনটাই তার বাদ যায়নি। আবার মাঝে মধ্যে সে গােপালবাবুর  কাছে.যায়। গােপালবাবু একজন সুদক্ষ অভিনেতা ও বিশেষজ্ঞ । তার কাছে গিয়েও অনেক উপকার হয় অরিন্দমের।

কিন্তু মন তার বােঝে না। শুধুমাত্র অভিনয় শিখে একটা মানুষ তার সব আশা পূর্ণ করতে পারে। গােপালবাবু বলেন, অভিনয় সর্বপ্রথমে জ্ঞান দেয়, সম্মান দেয় আর তার সঙ্গে দেয় অর্থ। সেই অর্থই এখন প্রয়ােজন অরিন্দমের। দ্বাদশ শ্রেণি অবধি পড়ে আর পড়াশুনা হয়নি অরিন্দমের। কিন্তু অরিন্দম বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ এবং শান্ত প্রকৃতির। গোপালবাবু বলেন, অরিন্দম অভিনয় কখনও অভিনয় বলে নিও না। চরিত্রের মধ্যে প্রবেশ করার চেষ্টা করাে, তারপর তােমার ভাব প্রকাশ করাে। | এইসব চিন্তা করতে করতে অরিন্দম প্রায় তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাে আর ঠিক সেই মুহুর্তে বৌদি মনীষা এসে বললাে, ঠাকুরপাে এখনও তােমার অভিনয় সাঙ্গ হলাে না। এবার ওঠো জাগাে চেয়ে দেখাে, সম্মুখে রয়েছে এক পেয়ালা চা আর — ‘মাের মাতৃসমা স্নেহশীলা বৌদি।। বাব্বা! তুমি এতও পারাে বলে বৌদি কাজে চলে গেলেন। বিকালে এক কাপ চা। পেলে যেন অরিন্দম হাতে স্বর্গ পায়। কিন্তু আবার ভাবে এক কাপ চায়েরও দাম চল্লিশ পয়সা। অরিন্দম ভাবলাে চাকরী তাকে একটা জোগাড় করতেই হবে। আরে কি চিন্তা করছিস। চল।  চল একটু ঘুরে আসা যাক, সুব্রত বললাে।



লেখাটি শেয়ার করুন

Leave a Reply