মিলনের পথে 9, 10, 11

মিলনের পথে: নবম, দশম ও একাদশ পর্ব

উপন্যাস
লেখাটি শেয়ার করুন

সুদীপ ঘোষাল,
পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ।

 

নয়

গােপালবাবু অরিকে দেখে তাকে আশীর্বাদ করলেন। বড় স্নেহের পাত্র অরিন্দম গােপালবাবুর কাছে। তিনি আদর করে অরি বলেন। একসময় সুযােগ বুঝে অরিন্দম অন্য প্রসঙ্গ টানলাে। বললাে, মাস্টারমশাই আপনার পরিবারে সদস্য কতজন?

-ওহাে তােমাকে বলাই হয়নি। আমার একটি মাত্র কন্যা আছে তার নাম…

– অপরূপা সেনগুপ্ত, বলে ঘরে প্রবেশ করলাে গােপালবাবুর কন্যা। ‘

-তুই কখন এলি মা?’ এত সকালে কোথায় গেছিলি?

-বাবা আমি আর মাসীমা যাত্রা দেখতে এসেছিলাম মাসীমা চলে গেলেন, কিছুতেই এলেন না, বললেন কাজ আছে।

-আমি চা করে আনছি বাবা বলে অপরূপা ভিতরে চলে গেল।

অরিন্দম কথাবার্তার মাথামুণ্ডু বুঝতে না পেরে চুপ করে রইল। গােপালাবু  বললেন, জানাে অরি অপরূপা খুব ছােট থাকতে, ওর মা মারা যায়, তারপর থেকে মাসীর কাছেই মানুষ। যা কিছু খরচ লাগে সবই আমি পাঠিয়ে দিই। যাতে আমার মেয়ে সুখে থাকে।।চা পান করতে করতে গােপালবাবু কন্যাকে অরিন্দমের পরিচয় দিন। তার পর সে অরিন্দমের সঙ্গে অপরূপার পরিচয় হয়েছে তা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারলেন না গােপলাবাবু।অপরূপাকে সত্যিই অপরূপ লেগেছে অরিন্দমের। এত ফ্রাঙ্ক, মেয়ে খুব কমই দেখা যায়। তার আন্তরিকতা অরিন্দমের হৃদয় প্রেমে সিক্ত  করে তুলল।



গােপালবাবুর বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে অরিন্দম গতরাত্রের উপার্জন করা টাকায় কিছু জিনিসপত্র কিনলো।ছেলের আয় করা টাকায় জুতাে জোড়া পেয়ে খুবই খুশী বাবা। বড় পুত্রের বিবাহ বছর খানেক হলাে হয়েছে, এবার মেজপুত্রের পালা। কিন্তু একটা চাকরী না হওয়া পর্যন্ত তারা এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না। তাই তারা চাকরীর খোঁজের জন্যে অরিন্দমকে বলল। | অরিন্দমের কিন্তু চাকরী সম্বন্ধে আর কোন চিন্তা হয় না। সে ভাবে যদি তাদের দলটি পাকাপােক্ত ভাবে গড়ে ওঠে তাহলে তার অর্থ উপার্জন করার কোন চিস্তাই নেই। সে অভিনয় কে পেশা হিসাবে গ্রহণ করতে চায়। আর চিন্তায়, শয়নে স্বপনে শুধু একটা মুখই অরিন্দমের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তাকে নিয়ে কতরকম রং বেরঙের স্বপ্নে আশার মন্দির রচনা করে মনের মধ্যে। তাকে হৃদয়ে স্থান দেবার জন্য যেন তার মন আকুলি বিকুলি করে। সে হল অপরূপা।

 

দশ

সামনের জুন মাসে শােভনের ও অশােকের বি.এ. ফাইনাল পরীক্ষা। পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যে অশােক শােভনের বাড়ী সকালবেলা এসে দুপুরে খেতে যায় এবং পুনরায় দুটো নাগাদ এসে একেবারে রাত্রিবেলা  ফিরে যায়। দুজনে একই সাথে শােভনের পড়ার ঘরে পড়াশুনা করে। একসাথে পড়াশুনা করার ফল সত্যি ভালাে। কারণ এতে আলােচনার ফলে একে অন্যকে বােঝাতে পারে। যাইহােক একরকম ভালোভাবেই দুজনের পড়াশুনা অগ্রসর হচ্ছিল। অশােক শােভনের কাছে পড়ার জন্যে আসত এটাই মুখ্য। কিন্তু সে আশা করতাে নিশ্চয় দেবীকার সঙ্গে তার দু একবার দেখা হবে, কথা হবে।



কিন্তু বিগত একমাসে এক মিনিটের জন্যেও দেবীকার সঙ্গে অশোকের দুটি বাক্য বিনিময় কিংবা একটিও বাক্য বিনিময় হয়নি।অশোক যে ঘরে পড়াশুনা করত সেই ঘরে ভুলে একবারও প্রবেশ করত না। কারণ দেবীকার ভালোবাসার  মর্ম, মর্মে মর্মে উপলব্ধি করত। সে জানত পড়াশুনার জন্যে একাগ্রতা বিশেষ প্রয়োজন। যদি সে অশোকের সামনে যায় হয়ত বা তার পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটবে। তার ফলেই অশোকের জীবনে উন্নতির বাধা হবে। অশােকের অনিষ্ট হওয়ার কথা চিন্তা করতে দেবীকার অন্তর ব্যথায় মুচড়ে উঠতাে। কিন্তু হায়রে ‘ভালােবাসার অন্য প্রান্ত, সে বুঝতাে না। অশােক ভাবতাে  বারাে থেকে চোদ্দ ঘণ্টা পর্যন্ত তাদের বাড়িতে থাকার ফলে দেবীকা হয়তাে নির্লজ্জ মনে করতাে। তাই অশােক একদিন শােভনকে বললাে এবার থেকে আমাদের বাড়ীতে যাওয়া তাের পালা। কারণ বাড়ীতে কয়েকদিন বাবা থাকছেন না। শােভনের কথাটির গুরুত্ব অশােকের কথায় সায় দিল।

দেবীকা যদিও শােভনদের পড়ার ঘরে আসতাে না, কিন্তু অশােকের যাওয়া আসা সকলই লক্ষ্য করতাে আড়াল থেকে। আজ চার পাঁচদিন হলাে অশােক তাদের বাড়ি আসছে না। দেবীকা দাদাকে জিজ্ঞাসা করলাে, দাদা,অশােক আজকাল তাে আসছে না তাের কাছে পড়তে। দেবীকা জানতে পারল। শােভনই তাদের বাড়ী যায় কারণটাও জানলাে। কিন্তু দেবীকা বুঝল কারণ একটাই। তা হলাে অশােকের অভিমান। বৌদি জিজ্ঞাসা করল কি হলাে দেবী, দেবাদিদেব মহাদেবের হলাে কি?

দেবীকা উত্তর করে না। অশােক পরীক্ষার দুদিন পূর্বে কোথায় পরীক্ষার সেন্টার হবে আর সবরকম সংবাদ নিতে কলেজে যাচ্ছিল। বাসে উঠেই অশােক কলেজের এক বান্ধবীর দেখা পেল। বান্ধবীটি জিজ্ঞাসা করল আরে কেমন প্রিপারেশন হলাে? উত্তর দিতে গিয়ে অশােক হঠাৎ দেখলাে দেবীকা ও তার বৌদি লেডিজ সীটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দেবীকাকে দেখতে পেয়ে অশােক একটু উচ্চস্বরে বলল ‘মােটামুটি হচ্ছে। তােমার কেমন হচ্ছে বলাে। অশােক বান্ধবীটির সঙ্গে তুই তুকারি করেই কথা বলতাে। সেইজন্য বান্ধবীটি অবাক হলাে। কিন্তু পরক্ষণেই অশােকের ইশারা পেয়ে সব বুঝতে পেরে বললাে, আর বলাে না, খুব পরিশ্রম হচ্ছে। শরীর ভালাে যাচ্ছেনা। তােমার শরীর ভালাে তাে?হাঁ বহাল তবিয়তেই আছি, তুমি ডাক্তার দেখাচ্ছাে তাে, শরীরের যত্ন নিও। তােমার যদি শরীর খারাপ হয় তাহলে –



দেবীকা আর শুনতে পারছে না। বৌদির হাত ধরে টেনে নামিয়ে পরের বাসে সে বাড়ী ফিরলাে। বাড়ী ফিরে শুয়ে শুয়ে দেবীকা শুধু কেঁদেই সারাটাদিন কাটিয়ে দিল। শােকে , অপমানে তার সেদিন আত্মহত্যার ইচ্ছা হলো। কিন্তু বৌদির পরামর্শে সে নিজের

মনকে স্থির করল।অশােকের কাছে মাসখানেক পড়তে গিয়েছিলাে। আর তার মধ্যেই বীথিকার সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল পরের দিন। | কথা বলেছিল বীথিকাই, বলেছিল শােভনদা আপনার পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। কোন মাস থেকে। শোভন বীথিকাকে আমার প্রাণের থেকেও যেন বেশী ভালাোবাসে।

 

এগারো

একটা কথা  ভালােভাবেই জানে বীথিকা, তাকে কি পরিমাণ ভালােবাসে। তাই তাদের মধুর মিলনে কোন বাধা নেই। তারা পরস্পর পরস্পরের সাথে মিলিত হয় সােনাদিঘির  সেই বট  গাছতলায়। তারা কথা বলে, গান গায় আর পূর্বের স্মৃতিচারণ আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা থেকে আরম্ভ করে রাজনীতি পর্যন্তও তাদের আলােচনা।  খেলাধূলারও খবর রাখে বীথিকা। শুধুমাত্র কতকগুলি ভালােবাসার ছেঁদো কথা, তারা কেউই ভালােবাসে না। প্রেম যে কি তা তাদের ভালােভাবেই জানা আছে। প্রেম ছেলেখেলা নয় প্রেম তপস্যা। প্রেমের মাধ্যমেই ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়া যায়। সেটা হল মানবপ্রেম। প্রেম যখন সকল কামনা বাসনায় উর্ধে উঠে যায় তখন সেই প্রেম হয় সুন্দর শাশ্বত। অবিনশ্বর। তবে বাথিকা শােভনের প্রেম তাে কামনা বাসনায় শূন্য নয়।

আবার শুধু কামনা বাসনাও নয়। সব থেকেও যেন কিছু নেই এই ভাব। তারা দুজনেই শিক্ষিত, মার্জিত, রুচিবান। তারা জানে এই পৃথিবীর এমন কোন শক্তি নেই তাদের বিচ্ছিন্ন করে। তাই তাদের মধ্যে ভালােবাসার কোন দ্বন্ধ নেই। তারা সবার সামনেই যেন বলে বেড়াতে চায় দেখ আমরা দুজনে কত সুখী, তােমরাও সুখী হও। বীথিকা। শােভন প্রেম দেখে প্রত্যেক তরুণ তরুণীর মনে ঈর্ষার উদ্রেক হয়। সেটা শুধু ঈর্ষা নয়। শ্রদ্ধা, ভালােবাসার প্রেমের সঠিক সংজ্ঞা। এতদিন যারা অন্ধকারে শুধু ঘুরে বেড়িয়েছে। আর প্রেম করেছে কিন্তু তার অর্থ বােঝেনি তারা আজ দুচোখ মেলে তাকিয়ে দেখে যেন এক নবজাগরণ। আজকাল যদি শোভন বীথিকাকে দুইদিন দেখতে না পায় শােভনের মতাে শক্ত যুবকের যেমন বুকটা ফেটে যায়।



সে বােঝে তাদের এই বন্ধন ভালােবাসার বন্ধন।। বাধিকার কাছে যে প্রেরণা শােভন পায় তার তুলনা মেলা ভার, শােভন আজ যেন।কোন মহাপুরুষের পর্যায়ে। কলা অপেরা’ আজ বর্ধমানে এক ক্লাবের বাৎসরিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে যাত্রা। বে। আরও একটি দল যাবে এবং সেই দলের যাত্রাটিই প্রথমে হবে।। করতে যাবে। সেখানে আরও এক আজ তাদের সঙ্গে যাবার জন্যে বায়না ধরেছে। তাছাড়া সে চাইছিল।



লেখাটি শেয়ার করুন

Leave a Reply