শাফি

শাফির পাঠ প্রতিক্রিয়া (ধ্বংসতত্ত্ব)

বুক রিভিউ
লেখাটি শেয়ার করুন

ইকরাম খান শাফি।। 

 

| ধ্বংসতত্ত্ব অথবা ইসরাফিলের শিঙা |
লেখক: Faiyaz Ifti
ঘরানা: কন্সপিরেসি থ্রিলার
প্রকাশনী: ভূমি প্রকাশ
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২২৪
মূল্য: ৩৪০/-
‘পুরনোর বিনাশ হলে ঈশ্বর সেই স্থান নতুন দিয়ে পূর্ণ করেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়া আর একশটা ছেলের মতোই হলের রাজনৈতিক প্রোগ্রাম আর গেস্টরুমের স্টিমরোলারে পরে বদলে যায় তুহিন। গাঁজা টেনে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় শহীদ মিনারের কোণায় সাক্ষী হয়ে যায় একটি খুনের। ঠিক সাক্ষী বলা যায় কি? সে যে শুধু একটা বাক্য শুনেছে, আর শুনেছে একটা গালি, “খানকির সন্তান”। এমন অদ্ভুতভাবে কাউকে গালি দিতে শুনেনি সে, শুনেছে শুধু তার ডিপার্টমেন্টের ঘনিষ্ঠ বন্ধু কাম রি-এড খাওয়া বড় ভাই আব্দুল্লাহ জিহাদীর মুখে। নাহ, নেশার ঘোরে সাক্ষী(?!) হওয়া খুনের ভিত্তি রইলো না যখন ঘুম ভাঙলো কার্জন হলে। ঘটনা জানালো তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু সূর্যকে। পরের দিন শহীদ মিনারে খোঁজেও খুনের কোনো প্রমাণ পেলো না। খটকা তাতে দূর হলো না। দুজনে দুজনের মতো খুঁজতে লাগলো আসল ঘটনা।
অন্যদিকে শিঙায় মুখ লাগিয়ে যেনো বসে আছে মহাক্ষমতাধর কেউ, যেনো কোনো এক মহাপ্রলয় ঘনিয়ে আসবে এক ফুৎকারে। প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র ভারতে হচ্ছে সিরিজ বোমা হামলা। ক্ষমতাধর আদিত্য নারায়ণ হাত মেলালেন আরেক ক্ষমতাধর ধর্মীয় সংগঠনের সাথে। ভারতে বসেই কলকাঠি নাড়ছেন ধ্বংসকারীকে ধ্বংসের।
ওয়াহহাব ভাই, তুহিনের হলের ক্যান্ডিডেট। তুহিনকে যেমন আদর করে, তুহিনও তেমন শ্রদ্ধা করে। ওয়াহহাব ভাইয়ের ডান হাত ছিলো শুভ ভাই। শুভ ভাইয়ের মৃত্যুর বদলা নিতে সেও উঠেপড়ে লাগে।
তিন, কিংবা বলা যায় চারমুখী হয়ে আগাতে থাকে গল্প। চার মুখ এক বিন্দুতে মিলে গেলে কি আরেকটা প্রলয় হবে না?
হবে।
——-
মতামত: দুই ভাগে মতামত দিবো। এক ভাগে সাধারণ পাঠক হয়ে অন্যভাগে লেখকের বন্ধু হয়ে।
প্রথমেই বলে রাখি, এটা লেখকের প্রকাশিত প্রথম বই। আমি বেটা রিডার হিসেবে আগেভাগেই পড়ে নিয়েছিলাম।
গল্পটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-কেন্দ্রিক হওয়ায় আমার পড়তে বেশ ভালো লেগেছে। যেন সব জায়গা নিজেকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছিলো। গল্পটার প্রথম অর্ধেক বিল্ডিংয়ে লেখক একটু বেশি বর্ণনার আশ্রয় নিয়েছেন। অনেক বিস্তৃত জাল বিছিয়েছেন। পরের অর্ধেক বেশ দ্রুত এগিয়েছে এবং ভালো রকমের ধাক্কা খেয়ে খেয়েই অনেকটা তুহিনের মতোই এগিয়েছি।
গল্পের প্লট বেশ দারুণ লেগেছে। ক্যাম্পাসে ছিলাম হিসেবে বুঝতে পারি গল্পের-আনুষাঙ্গিক-গল্পের সত্যতা কতো বেশি।
ক্যাম্পাসের বাইরের একজন মানুষও ঢাবির কালো দিকটা দেখতে পারবেন এই বই পড়ে।
ও হ্যা, লেখার মাঝে মাঝে যে কবিতাগুলো আছে, সেগুলো আমার প্রচুর ভালো লেগেছে।
লেখকের সংলাপ তৈরীতে একটু দুর্বলতা আছে। প্রথম বই হিসেবে সেটা সম্ভবত এড়িয়ে যাওয়ার মতোই একটা ভুল। সংলাপের আড়ষ্টতা কাহিনীতে তেমন কোন প্রভাব ফেলেনি বলেই আমার মনে হয়।
এখন আসি বন্ধুর দিক থেকে কী বলবো। গত তিন বছরে একটু একটু করে আগানো এক লেখা এটা। আমাদের আড্ডায় চুপচাপ বসে থাকা একটা মানুষ ও। ‘ঝিমধরা’ হিসেবেই পরিচিত। হলের কঠিন এই সময়টাতেও কীভাবে কীভাবে জানি আগায় নিসে বইটা। সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের পুকুর পাড়ে বসে কতো সন্ধ্যা-রাত এই বইয়ের ব্যাপারে খোঁজ নিতাম। কতো তাড়া দিতাম। তার কতো আক্ষেপের কথা শুনতাম বই ভালোভাবে আগাইতে না পারার। শেষ পর্যন্ত এই লকডাউন শাপেবর হয়ে এসেছে, শেষ করেছে এই দীর্ঘসাধনার বই।
বইটি পাওয়া যাচ্ছে রকমারি, বিবিধসহ সকল অনলাইন বুকশপে।


লেখাটি শেয়ার করুন

Leave a Reply