আরণ্যক
ফাইয়াজ ইফতি।।
যখন এই লেখাটা লিখছি তখন বাইরে বেশ জোরেশোরেই বৃষ্টি হচ্ছে। একে তো গভীর রাত, তার উপরে বৃষ্টি, এর মাঝে আবার লোডশেডিং, মাথায় নানান উদ্ভট চিন্তাভাবনা খেলা করার জন্য পারফেক্ট পরিবেশ। বন্ধুবান্ধবের আসরে আমি প্রায়শই দাবী করি জিন্দেগীতে চাকরীবাকরী করলে পাহাড়ে পোস্টিং নিবো। যেসব জায়গায় মানুষকে শাস্তিজনিত বদলী দেয়া হয় সেসব জায়গায় দরকার পড়লে ঘুষ দিয়ে হলেও চলে যাবো। টিনের চালের ঝম ঝম শব্দ ভেতরের সেই ফ্যান্টাসীটা আবার জাগিয়ে দিচ্ছে। চোখ বন্ধ করতেই যেন দেখতে পেলাম একটা আধবুনো এলাকা, ঝোপঝাড় কেটে করে বেশ খানিকটা জায়গা পরিষ্কার করা হয়েছে। সেখানে একটা কাঠের বাংলো টাইপ বাড়ি।
সামনে চওড়া বারান্দা কাঠের রেলিং দিয়ে ঘেরা। মাথার উপর টিনের দো-চালা। মাঝ বর্ষার বিকেল বোধহয় সময়টা, ঝম ঝম করে বৃষ্টি হচ্ছে। বারান্দার পাশ ঘেঁষেই একটা কদম গাছ, বারান্দার চেয়ারটাতে বসে বসেই হয়তো কদমের ভেজা ভেজা সৌরভমাখা গন্ধটুকু পাওয়া যাবে। বৃষ্টির দিনের বিকেল বলেই হয়তো তাড়াতাড়ি অন্ধকার হয়ে আসছে। কেউ একজন বসে আছে বারান্দাটায়। পাশের টেবিলে একটা ফ্লাস্ক আর একটা আধখালি কাপ পড়ে আছে, পাশেই একটা অ্যাসট্রে থেকে মিহি ধোঁয়া উড়ছে।
পেছনদিকে ফিরে বসে আছে তাই মুখটা দেখা যাচ্ছে না তবে হাতের বইটা কেমন পরিচিত মনে হচ্ছে। কি ওটা? বিবর? নাকি আট কুঠুরি নয় দরজা? নাহ্ ওটা বোধহয় বিভূতিবাবুর ইছামতি। কে জানে? অন্য কিছুও হতে পারে। একটু দূরে থেকে একটা কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে, মন খারাপ করা সুরে বিলাপ করছে যেন। বৃষ্টির ছাঁট আরেকটু যেন বাড়লো, সাথে সাথে বজ্রপাতের শব্দ হচ্ছে একটু পর পর। বাংলোর এরিয়া যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে তার নিজের দখলদারিত্ব বুঝে নিয়েছে প্রকৃতি। ভেজা ভেজা চকচকে পাতা নিয়ে গাছপালার রাজত্ব শুরু হয়েছে সেখান থেকে, দেখে মনে হচ্ছে এই বৃষ্টির ভেতরেও কে যেন সবুজ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে চারদিকে।
গাছগুলোর মাথার দিকে সাদাটে ধোঁয়ার মত কিছু একটা ভেসে বেড়াচ্ছে, বাংলোর বারান্দা থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। ভেজা মাটি, কাদা, থেঁতলে যাওয়া ঘাসপাতা সবকিছুর গন্ধ মিলিয়ে কেমন একটা সোঁদা সোঁদা মায়াময় গন্ধ নাকে এসে ঠেকছে। বাংলোর পেছন দিকে হয়তো কোনও পুকুর নাহয় ডোবা ধরণের কিছু একটা আছে। “কইমাছ উঠতাসে ছ্যার্, তাত্তাড়ি দেইখ্যা যান….” একটা চিল চিৎকার শোনা গেলো।
একটা ছাতা হাতে লোকটা উঠে বেরিয়ে গেলো, আমি তখনও সেই কল্পনার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। লোকটার পরণের থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, হাতে ছাতা, হাঁটার ধরণ সবই যেন আমার খুবই পরিচিত! ধরতে পারছি না লোকটা কে? ছাতা হাতে আস্তে আস্তে বেরিয়ে যাচ্ছে লোকটা দৃষ্টিসীমার বাইরে, আমি বোকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, কুকুরটা এখনও ডাকছে। আমার কল্পনা! আমার এখতিয়ারভুক্ত! অথচ আমি-ই প্রার্থনা করছি লোকটা যেন আমি হই। হোক না কল্পনা, কল্পনায়ই অন্তত সেই জীবনটা যেন ছুঁতে পারি…..(পুনশ্চ- নেটে সার্চ দিয়ে কল্পনার সবচেয়ে কাছাকাছি যে রেজাল্টটা পেয়েছি সেটাই সাথে যোগ করে দিলাম)