সিনেমার অ্যান্টি হিরো ও ভিলেন প্রসঙ্গ
মাহমুদ নেওয়াজ জয়।।
Anti-hero আর Villain এক জিনিস নয়।
নায়কের প্রতিনায়ক হিসেবে যে চরিত্রগুলো দাঁড়ায় তারা অ্যান্টিহিরো। তাদের কাজ বা উদ্দেশ্য নেতিবাচক হতে পারে, কিন্তু চলনে-বলনে বা আচরণে একরকম আভিজাত্য বা পারিপাট্য তাদেরও থাকে।
কিন্তু Villain ভিন্ন জিনিস। Village থেকে এর উৎপত্তি। যারা ভিলেন তারা মূলত প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ। গ্রামের মোড়ল কখনো ভিলেন, আবার কখনো তার শহুরে চলনে অভ্যস্ত সন্তান আবির্ভূত হতে পারে অ্যান্টিহিরো হিসেবে। তবে ভিলেনরা মূলত তথাকথিত শুদ্ধ ভাষা বা পরিশীলিত বাচনভঙ্গির অধিকারী না। সোজাকথায় তারা অনেকটা Raw.
বাংলা চলচ্চিত্রের কথা বলতে গেলে হুমায়ূন ফরীদির ‘বিশ্বপ্রেমিক’ ছবির রোলটা শক্তিশালী অ্যান্টিহিরো। নৃশংস এক সিরিয়াল কিলার সে, কিন্তু তার মনের গহীনে আছে প্রেম প্রত্যাখানের চাপা কষ্ট। নির্জনে অতীত স্মৃতি রোমন্থন করে সেও ফেলে চোখের জল।
আবার, ফরীদিরই সংশপ্তক নাটকের ‘কানকাটা রমজান’ ক্লাসিক একটি ভিলেন চরিত্র। শুধু গ্রামের বলে নয়; রমজানের ধূর্ততা, কূট-কৌশল, হুরমতির (ফেরদৌসী মজুমদার) প্রতি নৃশংসতা, আসাদকে হত্যাচেষ্টা – সবমিলিয়ে এক দুর্দান্ত ভিলেন এই রমজান।
নৃশংসতার ব্যাপারটা ভিলেনদের ক্ষেত্রে বেশি প্রকট। তবে অ্যান্টিহিরোরাও নৃশংস হতে পারে। যেমন- ভয়ংকর বিষুর ডিপজল। বন্ধুকে (সোহেল রানা) ফাঁসিয়ে বন্ধুর হবু বউকে (চম্পা) বিয়ের আসর থেকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলা কিংবা কল্পনায় তার সাথে অন্তরঙ্গ গানে প্রকটভাবে লালসা প্রকাশ করে বিষু। বিষু এমনিতে অভিজাত কেউ নয়, কিন্তু এই কাহিনীতে সে প্রতিনায়ক হিসেবেই আবির্ভূত হয়।
ডিপজলের অভিনীত আরেকটা ফিল্ম উল্লেখ্য। কাজী হায়াত পরিচালিত ‘ধাওয়া।’ এখানে কিন্তু সে পুরোদস্তুর ভিলেন। গ্রামনিবাসী নয় সে। কিন্তু ঢাকা শহরের প্রান্তিক শ্রেণিতে অবস্থান তার। নষ্ট রাজনীতির ক্ষমতারক্ষার মাধ্যম, একজন গণ্যমান্য মন্ত্রীর ডানহাত।
নৃশংস এই চরিত্রটির যাকে মেরে ফেলার ইচ্ছা, মেরে ফেলে নির্দ্বিধায়। সাথে থাকে মন্ত্রীর (মিজু আহমেদ) সমর্থন। এখানে মন্ত্রীর চরিত্র অ্যান্টিহিরো, কিন্তু ডিপজলের রোল ভিলেন।
উদাহরণ আরো অনেক দেয়া যায় আসলে।
রাজীব মূলত তাঁর বেশিরভাগ সিনেমাতেই অ্যান্টিহিরোর রোল প্লে করেছেন। আবার কাজী হায়াতের ‘দাঙ্গা’ সিনেমায় তাঁর রোল একজন নৃশংস ভিলেনের। আহমেদ শরীফের ‘গাংচিল ‘ সিনেমাতেও আমরা দেখি একজন উন্মাদ অ্যান্টিহিরোকে।
গোলাম মুস্তাফার ‘হারানো দিন’ ছবির জমিদার চরিত্রটি কিংবা রাজু আহমেদের ‘প্রতিশোধ’ সিনেমার চরিত্রটি শক্তিশালী অ্যান্টিহিরোর রোল। এখানে তারাও সমাজে গণ্যমান্য, সম্ভ্রান্ত, সম্মানী ব্যক্তিবর্গ; কিন্তু তাদের কার্য বা উদ্দেশ্য নেতিবাচক।
সহজ করে বললে, প্রতিনায়ক বা অ্যান্টিহিরোরা অনেকটা অভিজাত। তারা সবদিক থেকে নেতিবাচকও না। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য বা কর্মপন্থা নেতিবাচক। সুনির্দিষ্ট কোন ব্যাপারে নায়ক চরিত্রের সাথে তাদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। হুমায়ূন ফরীদি বা রাজীব বিশেষত এ ধরণের চরিত্র বেশি করেছেন। আরো আগের গোলাম মুস্তাফা যেমন।
আর ভিলেনরা মূলত নৈতিকতার কোন ধার ধারেনা। তাদের মূল লক্ষ্য নিজেদের কাজ বা স্বার্থরক্ষা। তাতে করে যত নিচেই নামতে হোক না কেন, তারা নামবে। আমাদের দেশে খলিল বা ফরীদির এমন বেশকিছু ভালো অভিনয় আছে। এটিএম শামসুজ্জামানও এক্ষেত্রে বেশ উল্লেখযোগ্য। আর বিশেষ করে এরকম চরিত্র সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পেয়েছেন মনোয়ার হোসেন ডিপজল। উনি যতটা অভিনেতা, তারচেয়ে বেশি গিমিকনির্ভর। তবে তার ‘ধাওয়া’, ‘সাবধান’, ‘বর্তমান’, ‘হীরা চুনি পান্না’ ছবিতে পাওয়া চরিত্রগুলো ভিলেন হিসেবে শক্তিশালীই ছিলো বেশ।