২.৮ ও হিরাদেশিব্যা
উন্মাদ।।
বাংলাদেশে প্রাইমারি, সেকেন্ডারি লেভেলের স্কুলের শিক্ষকেরা তুলনামূলকভাবে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চেয়ে বেতন, সুযোগ সুবিধা আর মর্যাদা অনেক কম পান। বিপরীতে পরিশ্রম বেশি করেন। এরপরেও তারা কিন্তু ছাত্রদের ভেতরে জ্ঞানের ক্ষুধা জাগিয়ে দেন। অধিকাংশ শিক্ষক তাদের এথিকস ঠিক রাখেন এবং সেটার বীজ ছাত্রদের মধ্য বপন করেন। সীমাবদ্ধতার মধ্যেও শিক্ষকেরা তাদের সেরাটা শিক্ষার্থীদের মাঝে বিলিয়ে দেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কুন্ঠিতবোধ না করে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতাকে মেনে নেন, ক্রমাগত প্রশ্ন করতে উদ্ভুদ্ধ করে।
অন্যদিকে সরকারি কলেজ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দিকে তাকিয়ে দেখেন, এরা তুলনামূলক সুযোগ সুবিধা, সন্মান অনেক বেশি পেয়ে থাকে। এত্ত সুযোগ সুবিধা পাওয়ার পরেও দেখেন তারা কী করে! অধিকাংশ সরকারি কলেজের শিক্ষকরা কলেজে নিয়মিত ক্লাস নিতে চায় না, আর ক্লাসে গেলেও মনযোগ দেয়না। এই শিক্ষকেরাই আবার তাদের আলাদা প্রাইভেট ব্যাচে ছাত্রছাত্রীদের ডাকে, পড়াতে থাকে। যারা তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে যায়, তাদের অধিকাংশ অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাগুলির প্রশ্নপত্র আগেই পেয়ে যায়/ এক্সামে প্রিভিলেজ পায়, আনফেয়ারলি নাম্বার বেশি দেওয়ার নজির ভুরি ভুরি। অধিকাংশ শিক্ষক ক্লাসে প্রশ্ন করলে উল্টো ধমক দিয়ে বসিয়ে, পাকনা ট্যাগ লাগিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে তার চেয়ে বেশি জানে কি না! এখন দেখেন এই মানুষগুলো কিন্তু আগের দুই ক্যাটাগরির চেয়ে সুযোগ সুবিধা অর্থ মর্যাদা বেশি পাওয়ার পরেও তাদের এথিকস ঠিক রাখতে পারছেনা। জ্ঞানের দৈন্যতা মানতে নারাজ। এরা জ্ঞানের ক্ষুধা জাগাবে কি উল্টো নেভাতে ব্যস্ত। আরও ব্লা ব্লা ব্লা সমস্যায় জর্জরিত।
এইক্ষেত্রে বেসরকারি/ সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত কলেজের শিক্ষকমণ্ডলী ব্যতিক্রম। এইসকল প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকেরা তুলনামূলক সরকারী কলেজের শিক্ষকদের চেয়ে সুযোগ সুবিধা কম পায়, তারপরেও কিন্তু এইমানুষগুলো নিজেদের সেরাটা ঢেলে দেয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানের ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয়, বিনয়ী হতে শেখায়। এথিকসের চর্চা করে, প্রশ্ন করতে উদ্ভুদ্ধ করে।
আর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকদের অবস্থা আর নাই বা বলি। ওপেন সিক্রেট এটা নিয়ে বলতে গেলে হয়তো ছাত্রত্ব নিয়ে পড়ে যাবে টানাটানি। উদ্ভব সিস্টেমের জাতাকলে পিষে হাজারো শিক্ষার্থীর মধ্যকার সম্ভাবনা কে হত্যা করে। মানে ব্যাপারটা এমন, হান্ড্রেড মিটার রেসের লাস্ট টেন মিটার বাকি থাকতেই আপনাকে বড়সড় একটা ধাক্কা দিয়ে ট্রাক থেকে ছিটকে ফেললে যেমনটা হয় আর কি। সরকার শিক্ষাখাতে বাজেট তুলনামূলকভাবে অনেক কম দিয়ে থাকে এটা নিয়ে একদম চিল্লাই চিল্লাই তাদের সীমাবদ্ধ আর দৈন্যতা প্রকাশ করে। তবে যে বাজেটেই দেয় সেইটারই সঠিক ব্যবহার করা হয়না। বিভিন্ন খাত উপখাত দেখিয়ে দায়িত্বে থাকা মানুষগুলো গোগ্রাসে গিলে তাদের উদর ভর্তি করে। এত্তকিছুর পরেও যে এদেশের শিক্ষার মান জিরোতে নামে নাই তাই বা কম কিসের।