একদিনও দেখা হয় নাই তাঁর সাথে: শাওন
দূর্বাঘাস আয়োজিত সাক্ষাৎকারের ৪র্থ পর্বে আমাদের অতিথি ছিলেন কবি ও লেখক রেজওয়ান শাওন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দূর্বাঘাসের সহ-সম্পাদক লিজা। প্রিয় পাঠক, তাহলে আর দেরি কেন? চলুন পড়ে নিই।
“প্রিয় লেখক, দূর্বাঘাস কর্তৃক আয়োজিত আড্ডায় আপনাকে স্বাগতম। আমি লিজা, দূর্বাঘাসে সহ সম্পাদক হিসেবে কাজ করছি। দূর্বাঘাস সবসময়ই অনলাইন ভিত্তিক সাহিত্যচর্চাকে সহজ করে তোলার জন্য যা যা সমর্থন অথবা সহায়তা প্রদান করা সম্ভব তা সহজলভ্য করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে আমাদের আজকের এই আড্ডার আয়োজন, আমরা চাই আড্ডার ছলে আপনার চিন্তা-আদর্শ-দর্শন এসবের সাথে একটু পরিচিত হতে। তো চলুন, সময় নষ্ট না করে শুরু করা যাক।
প্রথমেই সেই একই গৎবাঁধা প্রশ্ন দিয়ে শুরু করছি, কেমন আছেন?
উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ! আমি ভালো আছি। আপনি?
প্রশ্ন: আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনার জন্ম, বেড়ে ওঠা কোথায় এবং কিভাবে এ সম্পর্কে আমাদের পাঠকদেরকে যদি জানাতেন..?
উত্তর: আমার জন্ম ৭ই এপ্রিল ১৯৯৬ সাল, ফরিদপুরে। মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পড়াশোনা যথাক্রমে রনকাইল উচ্চ বিদ্যালয় এবং সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, ফরিদপুর। শৈশব, কৈশোর কাটিয়েছি বাবা-মায়ের সাথে গ্রামে। সর্বপ্রথম ঢাকায় আসি ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে “ভাষা প্রতিযোগ” নামে প্রথম আলো আয়োজিত একটা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে।
প্রশ্ন: এই যে লেখালেখি করছেন,এই লেখালেখির জগতে আসা কিভাবে? ঠিক কী কী বিষয় আপনার লেখক সত্ত্বাকে আবিষ্কার করতে সাহায্য করেছে কিংবা বলা যায় প্রভাব ফেলেছে?
উত্তর: গাছ, লতাপাতা, ফুল, নদী, এবং প্রজাপতির সুন্দর একটা পৃথিবী নিয়ে কবিতা লিখতাম, যখন আমি স্কুল-কলেজে পড়তাম। যখন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হলাম, অত্যন্ত অপ্রত্যাশিতভাবে আমার সামনে একটি অসুন্দর পৃথিবীর আবির্ভাব ঘটলো। পূর্বের সকল বিষয় বাদ দিয়ে আমি মানুষ, সমাজ, দেশ, রাজনীতি, সংস্কৃতি, প্রেম-প্রতারণা, লোভ-অহংকার এসব নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। যার প্রতিফলন আমার পরবর্তী লেখনীতে উঠে আসে। স্রষ্টার প্রিয় সৃষ্টি এই পৃথিবীর সর্বত্র প্রেম, সত্য এবং সৌন্দর্যের চর্চা থাকবে এমন প্রত্যাশা, একইসাথে স্বপ্ন ভঙ্গের কষ্ট আমার কবিতার অন্যতম বিষয়বস্তু।
প্রশ্ন: আপনার প্রথম বইটি সম্পর্কে আমাদের পাঠকদেরকে জানাতেন যদি?
উত্তর: আমার লেখা প্রকাশিত একমাত্র কাব্যগ্রন্থ- “সহস্র চোখ মেলে”। কাব্যটিতে ৪৮ টি কবিতা রয়েছে। প্রেম, দ্রোহ, উপেক্ষা, অপেক্ষা, প্রকৃতি, সৌন্দর্য এবং মানবতার বহুরূপ ফুটে উঠেছে কবিতার পঙক্তিতে।
প্রশ্ন: আচ্ছা, লিখতে যেয়ে কখনও মজার কোনো ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন কি?
উত্তর: প্রেমিক, কবি এবং পাগলের সমান্তরালে থেকে অনেক মজার ঘটনার জন্ম দিয়েছি। হরহামেশাই ১৫০ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিয়ে প্রিয় রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছি- পৃথিবীর সুন্দরতম মানুষটিকে দেখবো বলে। যাকে বলেছিলাম, “স্বর্গ চাইনা আমি তোমাকে চাই, তোমাকে পেলেই আমার স্বর্গ পাওয়া হয়”। সত্যি বলছি- একদিনও দেখা হয় নাই তাঁর সাথে।
এটা নিয়ে কোথাও লিখেছি- “এই পথই মোর তীর্থভূমি- পথের শেষে তোমার বাড়ি”। “তোমার বাড়ির আঙ্গিনায় একটি কাঁক চেঁচিয়ে বেড়ায়……….. তোমার বাড়ির আঙ্গিনাই দাঁড় কাঁকটির ঠিকানা, এতো নিষ্ঠুর হইয়ো না- তাকে তাড়িয়ে দিও না!!!!
আর হ্যাঁ, এমনটাও হয়েছে সারাদিনে ঐ রাস্তা দিয়ে কতোজন মানুষ গিয়েছে, সেটাও গুণে রেখেছি!
প্রশ্ন: বাহ্!! পাঠকরা সামনে নতুন কোনো বই পাচ্ছে কি?
উত্তর: অবশ্যই হ্যাঁ। তবে এবার উপন্যাস আসবে- জীবনধর্মী উপন্যাস। আত্মসমালোচনা, সমাজ সংস্কার, কৃত্রিম শ্রেণিবিভেদ, অর্থ-বৈভব-অহংকার। প্রেম-একজন মানবী কিভাবে ঈশ্বরের মতো শক্তিশালী হয়ে ওঠে আবার কিভাবেই বা ঘৃণার নদীতে বিসর্জিত হয়,,,, ইত্যাদি নিয়েই উপন্যাসের মূল কাঠামো।
প্রশ্ন: লেখালেখির ক্ষেত্রে কোন বিষয়টি আপনাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দেয়?
উত্তর: পাঠকের ভালোবাসা।
প্রশ্ন: আপনার প্রিয় লেখক কে কিংবা কার লেখা ভালো লাগে?
উত্তর: আহমদ ছফা। তাঁর উপন্যাস ” অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী” আমি একাধিকবার পড়েছি। ছফার অন্যান্য প্রিয় লেখনীর মধ্যে “নক্ষত্রের পতন” গল্পটি আমার খুব আপন। কেন যেন মনে হয় তিনি এই গল্পটি আমাকে নিয়ে লিখেছেন! যদিও সাল-তারিখের পৃথিবী সেই স্বীকৃতি কখনোই দেবে না!
আর হ্যাঁ, কবিতায় আমার কাছে সেরা- কবি হেলাল হাফিজ।
প্রশ্ন: পাঁচ বছর পর নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চান?
উত্তর: নিজের ওপর অর্পিত সকল দ্বায়িত্ব ও পালনে যোগ্য অবস্থান।
প্রশ্ন: আচ্ছা,যারা আপনার মতো লেখক হতে চায়, তাদেরকে কিভাবে প্রস্তুত করতে হবে নিজেদেরকে?
উত্তর: দেশি-বিদেশি প্রচুর বই পড়া, ভ্রমণ করা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিজেকে সময় দেয়া, নিজের মতো আদর্শ পৃথিবী তৈরি করা।
প্রশ্ন: মনুষ্যত্বের বিকাশের ক্ষেত্রে সাহিত্য কতটুকু ভূমিকা পালন করে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ পৃথিবী বিনির্মানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- সাহিত্য সংস্কৃতির চর্চা।
প্রশ্ন: লেখালেখির ক্ষেত্রে আপনি নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেন নাকি পাঠক চাহিদাকে?
উত্তর: লেখার সময় আমি কখনোই পাঠকের কথা চিন্তা করি না। নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেই। অন্তত এই একটা জায়গায় আমি সমাজের স্বেচ্ছাচারী নিয়ন্ত্রণকে অস্বীকার করি। নিজেকে সবচেয়ে স্বাধীন এবং শক্তিশালী মনে করি- সাহিত্যে, লেখনীতে।
প্রশ্ন: আচ্ছা, বই প্রকাশ করতে যেয়ে আপনাকে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে কি?
উত্তর: ভালো প্রকাশনা খুঁজে পেতে সময় লেগেছে।
প্রশ্ন: আমরা আড্ডার একদম শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি।শেষ করার আগে আমরা আপনার মুখ থেকে দূর্বাঘাস এবং দূর্বাঘাসের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে দু-একটা কথা শুনতে চাইবো-
উত্তর: সাহিত্যচর্চাকে বেগবান করার জন্য দূর্বাঘাসের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। দূর্বাঘাসের জন্য সবসময় শুভকামনা থাকবে।
লিজা: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে,আপনার মূল্যবান সময় থেকে আমাদেরকে কিছুটা সময় ধার দেওয়ার জন্য।ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আবার হয়তো দেখা হবে অন্য কোনো আড্ডায়..ততদিন পর্যন্ত বিদায়।
রেজওয়ান: আপনাকেও ধন্যবাদ। এমন সুন্দর উদ্যোগে আমাকে আহবান করার জন্য।