বাঁশি
সুদীপ ঘোষাল,
পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ।
গ্রামের নাম রূপাডিহি।আশেপাশে প্রচুর গ্রাম।সবাই সকলের খবর রাখে।সৌমদীপ এখানকার ছেলে।কতজন যে এই বাস স্ট্যান্ডে ওঠানামা করে তার ইয়ত্তা নেই।ঠিক জীবন মরণের মত।যার সময় হয় সে আসে আর তারপর চলে যায়।
সৌম্যদীপ সকলের কাছে সৌম্য বলেই পরিচিত। অনেকে আদর করে সোম বলেও ডাকে।
ছোটো থেকেই সে পড়াশোনায় খুব ভালো। আবার ডানপিটে সাহসীও বটে।কথাগুলো বলছিলেন সোমের দাদু। বিনয় শুনছে। বিনয় সব জানে।তবু শুনছে। দাদু আজ সোমের সাফল্যে খুব খুশি।সাফল্যের পিছনে দাদুর অবদান অনেক।ছোটো থেকে সোম দেখে আসছে দাদু তাকে মায়ের আদরে মানুষ করেছেন। বাবা মায়ের মধ্যে যখন সাংসারিক বিষয়ে তর্কাতর্কি চলতো তখন দাদু সোমকে অট্টহাসের মাঠে,মন্দিরে ঘুরিয়ে আনতেন। অট্টহাসের মন্দিরে পঞ্চমুন্ডির আসন দেখে সোম বলেছিলো,আমি অই আসনে বসবো। দাদু বলতেন,ছোটোদের এই আসনে বসতে নেই। এর জন্য অনেক সাধনা করতে হয়।
—– সাধনা কি দাদু?
—— এই মনে করো তুমি পড়তে বসার আগে মা সরস্বতীকে প্রণাম করে বসলে। তারপর ফাঁকি না দিয়ে ভালোভাবে পড়াশোনা করলে। দিনরাত সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করলে।
—— সিদ্ধিলাভ আবার কেমন?
_——- তুমি মন দিয়ে পড়াশোনা করলে আর তার ফলে পরীক্ষায় ভালো ফল করলে। এই হলো তোমার সিদ্ধিলাভ।
তারপর দাদু সন্ধ্যাবেলা পড়তে বসার আগে একটা মন্ত্র শিখিয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন রোজ পড়তে বসার আগে এই মন্ত্রটা পাঠ করবে।
সোম বলতো দাদুর সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রটা। ” মুকং করোতি বাচালং পঙ্গুং লঙ্ঘয়তে গিরিম্। যৎকৃপা তমহং বন্দে, পরমানন্দ মাধবম্।। “
দাদুর কাছেই ছোটোবেলায় জীবনের ভিত শক্তপোক্ত হয়ে গেছিলো সোমের। তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। এক একটা ইমারত ফাঁকি দিয়ে তৈরি হয়। তাই সামান্য ভূকম্পে ভেঙ্গে পরে। সোমের ভিত শক্ত বলেই মন ভেঙ্গে পরেনি কোনোদিন। দাদু জানতেন সোমের অন্দরমহলের কথা। তাই কোনোদিন কোনো কাজে দাদু বাধা দেন নি বড়ো প্রিয় তার নাতিকে। মুক্ত বিহঙ্গের জীবন দর্শন তার পরতে পরতে। সময়ের স্বাভাবিক নিয়মে সে বড়ো হলো সাফল্যের অনেক সিঁড়ি পার করে।
তারপর দাদুর অজান্তে সোম কোথায় যে চলে গেলো,কেউ জানতো না।
সোমের দাদু ও বাবা গোমোতে ছিলেন তখন।
সৌম্যের মা কান্নাকাটি করতেন। দাদু তার বাড়ি এসে বলতেন,হীরের টুকরো তোমার ছেলে। ঈশ্বর ঠিক রক্ষা করবেন,চিন্তা কোরো না।
সাফল্যের ইতিহাস বেশ জটিল। দাদুকে সৌম বলছে নিজের কথা। বিনয় বসে আছে দাদুর পাশে। বাড়ির সবাই বসেছে সোমের সামনে।
সৌম বলে চলেছে তার হারিয়ে যাওয়া বছরগুলোর কথা। সৌম তার জীবনের অজানা অধ্যায় প্রকাশ করছে সকলের কাছে।সৌম ফিরে গেল আবেগময় জীবনে। সে মন্ত্রমুগ্ধের মত বলতে লাগল তার জীবনের কথা।
,
দাদু আর বাবা তখন চাকরী করতেন। বছরে দুবার আসতেন। আমি তখন সেই সুযোগে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতাম আমতলা,বেলতলা। গোকুল পুকুরের জল শুকিয়ে গেলে পুকুরের মাঝখান দিয়ে রাস্তা হয়ে যেতো।সেই পুকুরের গা ছে ভূত থাকতো। শুনেছি। একদিন স্বচক্ষে দেখলাম। হাতে কমন্ডুল নিয়ে গোকুল পুকুরের পাশের জঙ্গলে ঢুকে গেলো। সেই দৃশ্য আজও আমার চোখে ভাসে। তারপর সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বড়ো হলাম।গ্রাজুয়েট হওয়ার পরে আমার ঈশ্বর দর্শনের ইচ্ছা হলো। বেড়িয়ে পরলাম বাড়ি ছেড়ে। ঘুরতে ঘুরতে ক্ষিদে পেয়ে গেলো। মনে পরছে বাবা মায়ের আদর করে খেতে দেওয়া। আর একটু ভাত নে খোকা। কত অভুক্ত শিশুর মুখ ভেসে উঠছে আকাশ জুড়ে। বীরভূম জেলার জয়দেবের কেন্দুলি মেলা চলছিলো। সেখানে চলে এলাম। মচ্ছব খেলাম। তারপর এক বটগাছের তলায় ঝুড়ি নামা বটগাছের মতোই জটাজুট ধারি এক সাধুবাবা বসে আছেন। দেখলাম ওর থালায় অনেক পয়সা। আমি মজা করে কাড়াকাড়ি করছি।সাধুবাবা দেবেন না। আমিও ছাড়বো না। হঠাত্ সাধু হু হু করে কান্না শুরু করলেন। আমি তাড়াতাড়ি সাধুর থালা ছেড়ে দিলাম।সাধু বললেন,না না আমি থালার জন্য কাঁদি নাই।এই নে তোর থালা।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম,তাহলে কি জন্য কাঁদছেন।
সাধু বললেন,রত্নার জন্য। সে আমাকে ঠকিয়ে ল্যাং মেরে পালিয়েছে।
আমি ভাবলাম,এই বয়সেও সে রত্নার জন্য অনুরাগ,ভালবাসা পুষে রেখেছে। কি বিচিত্র মানবজীবন।
পাশ দিয়ে কোপাই নদী বয়ে চলেছে। লাল মাটির উঁচুনীচু ঢিবি। মন কেড়ে নেওয়া হাওয়া। সব কিছু ছাড়িয়ে সাধুর হায় হায় স্বর হাওয়া বাতাস ছাড়িয়ে নদীর জলে হারিয়ে যাচ্ছে।
আমার চিন্তার সুতো সরিয়ে সাধুবাবা বলে উঠলেন,কি গো কিছু বলো।
আমি বললাম,আপনি রত্নাকে ভালোবাসতেন? কতদিনের সম্পর্ক আপনাদের?
উনি চলে গেলেন কিসের লোভে, আপনার হৃদয়ে আঘাত করে। দেহবিলাসির এই অবস্থা হয় বুঝলেন।
সাধু বললেন, ছি ছি ওকথা বলো না। ও আমার কন্যার মত। মেয়ের মতো ভালবাসতাম ওকে। হু হু হু…
আমি বললাম,মেয়ের মত। তাহলে? কেন , কি কারণে আপনাকে ছেড়ে গেল বলুন। আমি শুনতে চাই।
সাধু বললেন,আমি গান লিখেছি অনেক। আমি গীতীকার ও সুরকার।
রত্না আমার সব গান নিয়ে পালিয়ে গেছে। এখন নিজের নামে সব চালিয়ে দিচ্ছে।
ও দরদি আর একমুঠো আকাশ দে… , বড়ো মানুষের মন লো,এইসব গান শোনো নি।বিখ্যাত সব লোকসংগীত।
—– হ্যাঁ শুনেছি, সবাই শুনেছে। সব বিখ্যাত গান। রত্না লাহার কন্ঠে।
আমি বললাম আপনার নাম কি?
সাধু বললেন,কাউকে বোলো না। আমি হিয়ানন্দ চট্টরাজ।
আমি তো অবাক। বলে কি লোকটা। ভাবলাম, হতেও পারে। ছাই সরিয়ে সোনা,একবার দেখলি না কানা।
সঙ্গে সঙ্গে আমি সাধুকে নিয়ে চলে এলাম বোলপুর। দাড়ি,গোঁফ কামানোর পর সবাই চিনতে পারলেন।
নব বিশ্বভারতীর এক প্রফেসর বললেন,ইনিই সেই হিয়ানন্দ। সুরকার,গীতিকার। আর তুই সোম শোন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি হয়ে যা। পড়াশোনা শুরু কর।
স্যার আমাকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি আমার সকল সমস্যা দূর করলেন।
হিয়ানন্দবাবু আবার লেখা শুরু করলেন। কবি, লেখকের মৃত্যু নেই। পাঠকের হৃদয়ে তারা চির অমর।লেখা চুরি করে লেখককে কেউ ফতুর করতে পারে না। আর চোরেরও কোন লাভ হয় না।
তারপর আমার পালে হাওয়া উঠলো। তর তর করে এগিয়ে গেলো পানসি।সৌম্য বলে চলেছে তার জীবন কাহিনী, আমার মনে পড়ছে,কোপাই নদীর ধারে আশ্রম করেছিলাম। মহিলা ও পুরুষের পায়খানা ঘর তৈরি করেছিলাম পাঁচটা গ্রামে চাঁদা তুলে। কি সুন্দর পরিবেশ। সহজ সরল লোকের ভালোবাসা ভুলিয়ে দিয়েছিলো কৃত্রিম শহুরে জীবন।
একবার রাতে আমার ভালোবাসার লোকেরা খবর দিলো, বটগাছের তলায় অপ্সরা নামেন আকাশ থেকে।
—- কাছে গেয়েছিস কোনোদিন?
—- না বাবা ভয় লাগে। অমর বললো।
—– তাহলে চ, আজকে চ, সবাই দেখে আসি।
পাঁচজন গেলাম। তখন এক মহিলা বললেন,টাকা এনেছিস?
আর একজন বললো, ফেলো কড়ি মাখো তেল….
আর বুঝতে বাকি থাকলো না। ওরা অপ্সরা নয়, বেশ্যা। রোজগার করে, কষ্টের সংসারে।
মনে পড়ছে,গ্রামের সহজ সরল লোকগুলোকে
কিছু ঠগ ঠকিয়ে রোজগার করে। একটা সুড়ঙ্গ। তার ভিতরে মা মনসা থাকেন। সাপের ফোঁস ফোঁস শব্দে ওদের ভয় পায়। ঠাকুরের নাম করে সবাই দু টাকা, পাঁচ টাকা দেয়। আর ওই টাকা মদ আর মাংসে খরচ করে খচ্চর গুলো।
একদিন আমি একা সুড়ঙ্গ দিয়ে নেমে দেখলাম কেউ নেই, কিছু নেই। হাওয়ার শব্দ। মানুষের ভুল ধারণা ভেঙ্গে গেলো। বন্ধ হয়ে গেলো রোজগার। ওদের রাগ হলো। ষড়যন্ত্র শুরু করলো ওরা।
আমার ভক্ত রহিম বললো,বিরাজুলের কাছে শুনলাম আপনাকে আজ রাতে আক্রমণ করবে খচ্চরের দল। সাবধানে থাকবেন। হিন্দু, মুসলমান সব জাতির লোকের সঙ্গে আমি মিশতাম।
সেদিন একটা লাঠি হাতে ওদের খেলা দেখালাম।
মারতে এসে ওরা বসে পরলো আমার খেলা দেখার জন্য। দশটা টালি পর পর সাজিয়ে ভেঙ্গে দেখালাম।
ওদের একজন বললো,এ ব্যাটা সাধু না ডাকাত। তারপর আমার মারমুখী মূর্তি দেখে ওরা ভালো মানুষের মতো বললো,আমরা আপনার এখানে বেড়াতে এসেছিলাম। অন্য কিছু নয়।
তারপর থেকে আর ওরা কোনো অসুবিধা করে নি। ওরাও ভক্তের দলে নাম লিখিয়েছিলো।
ঈশ্বর দর্শন আমার হলো সহজ সরল মানুষের মাঝে।
তারপর বাড়ি ফেরার গল্প। প্রফেসর আমাকে নিজে পৌঁছে দিয়ে এলেন বাড়ি।
এবার বাড়ি ফিরে সৌম্য গ্রামের সকলের সঙ্গে মেশে। সহজ সরল মানুষকে সে ভালবাসে। তাদের সুখ দুঃখে তাদের পাশে থাকে। তার জীবনের ঘটনাগুলো সে গল্পের মত গ্রামের বন্ধুদের শোনায়। পুরোনো দিনের কথা বলতে খুব ভালবাসে সৌম্য। সহজ, সরল, সুন্দর মানুষদের সেই গল্প শুনিয়ে আনন্দ পায়।
সৌম্য বলছে, আজ আমি আবার পড়াশোনায় মন দিয়েছি। তবু ভুলতে পারি না বাল্যবন্ধুদের।সে বলে চলেছে গ্রামের বন্ধুদের স্কুলজীবনের কথা। গ্রামের বন্ধুরা তাকে ভালবাসে। মন দিয়ে শোনে তার গল্প। সৌম্য বলছে কদতলার মাঠে এসে ঢিল মেরে পেরে নিতাম কাঁচা কদবেল। কামড়ে কচ কচ শব্দে সাবাড় করতাম কদ। বুড়ো বলতো, কদ খেয়ছিস। আর খাবি। কই তখন তো গলা জ্বলতো না। এখন শুধু ওষুধ। ভক্ত,ভব,ভম্বল,বাবু বুলা, রিলীফ সবাই তখন আমরা আমড়া তলায় গিয়ে পাকা আমড়া খেতাম। জাম, তাল,বেল, কুল,শসা, কলা, নারকেল কিছুই বাদ রাখতাম না। নারকেল গাছে উঠতে পারতো গজানন। শুধু দুহাতের একটা দড়ি। তাকে পায়ের সঙ্গে ফাঁদের মতো পরে নিতো গজানন। তারপর কিছুক্ষণের মধ্যেই নারকেল গাছের পাতা সরিয়ে ধপাধপ নিচে ফেলতো। আমরা কুড়িয়ে বস্তায় ভরে সোজা মাঠে। বাবা দেখলেই বকবেন। তারপর দাঁত দিয়ে ছাড়িয়ে আছাড় মেরে ভেঙ্গে মাঠেই খেয়ে নিতাম নারকেল। একদম বাস্তব। মনগড়া গল্প নয়। তারপর গাজনের রাতে স্বাধীন আমরা। সারা রাত বোলান গান শুনতাম। সারা রাত নাচতাম বাজনার তালে তালে।
সৌম্য এইসব সাধারণ মানুষের মাঝে, বন্ধুদের মাঝে ঈশ্বরের সন্ধান করে বেড়ায় সারাদিন।
শীতকালে খেজুর গাছের রস। গাছের কামান হতো হেঁসো দিয়ে। মাথার মেথি বার করে কাঠি পুঁতে দিতো গুড় ব্যাবসায়ী। আমাদের ভয় দেখাতো, ধুতরা ফুলের বীজ দিয়ে রাকবো। রস খেলেই মরবে সে। চুরি করা কাকে বলে জানতাম না। একরাতে বাহাদুর বিশুর পাল্লায় পরে রাতে রস খেতে গেছিলাম। বিশু বললো, তোরা বসে থাক। কেউএলে বলবি। আমি গাছে উঠে রস পেরে আনি। তারপর গাছে উঠে হাত ডুবিয়ে ধুতরো ফুলের বীজ আছে কিনা দেখতো। পেরে আনতো নিচে। তারপর মাটির হাঁড়ি থেকে রস ঢেলে নিতাম আমাদের ঘটিতে। গাছেউঠে আবার হাঁড়ি টাঙিয়ে দিয়ে আসতো বিশু। সকালে হাড়ি রসে ভরে যেতো। ভোরবেলা ব্যাবসায়ির কাছে গিয়ে বলতাম, রস দাও, বাড়ির সবাইকে দোবো। বুক ঢিপঢিপ চাঁদের গর্ত। দেবে কি দেবে না, জানিনা। অবশেষে প্রাপ্তিযোগ। যেদিন রস পেতাম না তখন মাথায় কুবুদ্ধির পোকা নড়তো। তাতে ক্ষতি কারো হতো না। বিশু ভালো মিষ্টি রস হলে বলতো, এটা জিরেন কাঠের রস। মানে চারদিন হাড়ি না বাঁধলে রস মিষ্টি হতো। জানি না। আমরা গাছে নিচে গিয়ে হাঁ করে দাঁড়িয়ে থাকতাম। রস পরতো জিভে টুপ টাপ। কতদিন ঘনটার পর ঘনটা কেটে গেছে রসাস্বাদনে। মোবাইল ছিলো
না।ফেসবুক ছিলো না। কোনো পাকামি ছিলো না।সহজ সরল হাওয়া ছিলো। ভালোবাসা ছিলো। আনন্দ ছিলো জীবনে। ব্লু হোয়েলের বাপ পর্যন্ত আমাদের সমীহ করে চলতো। কোনোদিন বাল্যকালে আত্মহত্যার খবর শুনিনি। সময় কোথায় তখন ছেলেপিলের। যম পর্যন্ত চিন্তায় পরে যেতো বালকদের আচরণে, কর্ম দক্ষতায়।
সোম বলে যাচ্ছে তার জীবনের অভিজ্ঞতার কথা। পট দেখানো শিল্পীর মুগ্ধতায় সবাই শুনছেন তার জীবন কাহিনী। যে কাহিনী শুধু সোমের। তার আনন্দের সাক্ষী শুধু তার সফল হৃদয়। হৃদমাঝারে জেগে ওঠে রাখালিয়া বাঁশির সুর। সে বলে চলেছে স্কুল জীবনের কথা।
আমরা চার বন্ধু। রমেন, জীবন, বিশু আর আমি। যেখানেই যেতাম একসাথে থাকতাম। বিশু ছিলো আমাদের দলের অলিখিত নেতা। নেতা তো এমনি এমনি হয় না। তার কাজ,দল চালানোর কৌশল তাকে নেতা বানিয়েছিলো। একদিন দুপুর বেলায় সে আমাদের ডাক দিলো তার বাঁশি বাজিয়ে। বাঁশির ডাক শুনেই মন চঞ্চল হয়ে উঠতো। ঠিক যেনো রাধার পোড়া বাঁশির ডাক। চুপি চুপি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে বটতলায়। আমাদের মিলন অফিস ছিলো এই বটতলা। চারজন ছুটে চলে যেতাম মাঠে। সেখানে বিশুবলতো, দাড়া কয়েকটা তাল কাঁকড়া ধরি । ভেজে খাওয়া যাবে।
বলেই হাত ভরে দিলো সোজা ধানের জমির গর্তে। একটা মাগুর ধরেছি, বলেই মাথা টিপে হাত বের করতেই দেখা গেলো মাছ নয়একটা বড় কালো কেউটে সাপ। বিশু সাপটাকে সাঁ সাঁ করে ঘুরিয়ে সহজেই ছুঁড়ে দিলো দূরে। তারপর তাল কাঁকড়া ধরে ভেজে খাওয়া হলো মাঠে। ভাজার সমস্ত সরঞ্জাম বিশু লুকিয়ে রাখতো একটা পোড়ো বাড়িতে। সাঁতার কাটতে যেতাম নতুন পুকুরে। একবার ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রেহাই পেয়েছিলাম তার প্রখর বুদ্ধির জোরে। মাথার চুল ধরে টেনে তুলেছিলো ডাঙায়।
গ্রীষ্ম অবকাশে বট গাছের ডালে পা ভাঁজ করে বাদুড়ঝোলা খেলতাম বিশুর নেতৃত্বে।তারপর ঝোল ঝাপটি। উঁচু ডাল থেকে লাফিয়ে পড়তাম খড়ের গাদায়। এসব খেলা বিশুর আবিষ্কার। তারপর সন্ধ্যা হলেই গ্রামের বদমাশ লোকটিকে ভয় দেখাত বিশু। সুদখোর সুরেশ মহাজন বটগাছের ডাল থেকে শুনলো, কি রে বেটা খুব তো চলেছিস হনহনিয়ে। আয় তোকে গাছে ঝোলাই। সুদখোর অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো। তারপর থেকে ও পথে যেত না মহাজন। সাদা চুলো গান্ধিবুড়িকে রোজ সন্ধ্যাবেলা নিজের মুড়ি খাইয়ে আসতো অতি আদরে। বিশু বলতো, আমি তো রাতে খাবো। বুড়ির কেউ নেই, আমি আছি তো। শ্রদ্ধায় মাথা নত হত নেতার হাসিতে।
একবার বন্যার সময় স্কুল যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন আমাদের নেতা। কোথাও সাঁতার জল কোথাও বুক অবধি জল। একটা সাপ বিশুর হাতে জড়িয়ে ধরেছে। বিশু এক ঝটকায় ঝেরে ফেলে দিলো সাপটা। স্কুল আমাদের যেতেই হবে। সাঁতার কাটতে কাটতে আমাদের সে কি উল্লাস। যে কোনো কঠিন কাজের সামনাসামনি বুক চিতিয়ে সমাধান করার মতো মানসিকতা বিশুর ছিলো। সে সামনে আর আমরা চলেছি তার পিছুপিছু। শেষ অবধি পৌঁছে গেলাম স্কুল। হেড মাষ্টারমশাই খুব বাহবা দিলেন স্কুলে আসার জন্য। তিনি বললেন, ইচ্ছা থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।
টিফিনের সময় ছুটি হয়ে গেলো। আসার সময় একটা নৌকো পাওয়া গেলো। মাঝি বললেন, আমার বয়স হয়েছে আমি একা অতদূর নৌকা বাইতে পারবো নি বাবু। তাছাড়া আমার এখনও খাওয়া হয় নি।
বিশু সঙ্গে সঙ্গে নিজের টিফিন বের করে দিলো। আমরাও মন্ত্রমুগ্ধের মতো টিফিন বের করে দিলাম। মাঝি ভাই বললেন, এসো সবাই এক হয়ে খেয়ে লি। তারপর নৌকার কান্ডারি হলো বিশু। আর আমরা সবাই মুড়ি মাখিয়ে খেতে শুরু করলাম। মাঝি ভাই ও বিশু খেলো। ধীরে ধীরে পৌঁছে গেলাম গ্রামে। মাঝি ভাইকে পারিশ্রমিক দিয়ে বিদায় জানালাম।
পরের দিন রবিবার। রঙিন সকাল। আকাশে মেঘের আনাগোনা। কাশের কারসাজি নদীর তীর জুড়ে। বন্যার জল নেমে গিয়েছে। পুজো পুজো ভাব। বিশু কাশফুলের ভিড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে। কয়েকদিন হলো তাকে দেখা যাচ্ছে না।
আমি ঘুরতে ঘুরতে পুজো বাড়ির ঠাকুর দেখতে গেলাম। সেখানে দেখি বিশু হাতে কাদা মেখে শিল্পীকে সাহায্য করছে। তিন দিন ধরে এখানেই তার ডেরা। এখন তার মনে বাজছে ঢাকের ঢ্যামকুড়াকুড়। মন মন্দিরে তার দুর্গা গ্রামদেশ ছাড়িয়ে অভাবি বাতাসে বাতাসে। পুজো বাড়িতে আমাকে দেখেও কোনো কথা না বলে হাঁটতে হাঁটতে বাইরে চলে গেলো।
আমি জানি সে এখন চাল, ডাল নিয়ে সর্দার বুড়িকে রেঁধে খাওয়াবে। সে বলে, ওর যে কেউ নেই। ও খাবে কি?
বিশুর বাবা বছরে একবার বাড়ি আসেন। তিনি ভারতীয় সৈন্য বিভাগে কাজ করেন। বাড়িতে এলেই বিশুর হাতে হাতখরচ বাবদ তিনি বেশ কিছু টাকা দিয়ে যান। সেই টাকা বিশু লোকের উপকারে কাজে লাগায়।
বড়ো অবাক হয়ে ভাবি, ছোটো বয়সে এতবড় মন সে পেল কোথা থেকে?
স্কুলের দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় আমাদের চার বন্ধুর বাড়ির গার্জেনরা শলা পরামর্শ করে হোষ্টেলে থাকার কথা বললেন। দায়িত্ব নিলো বিশু। কিন্তু হেড মাষ্টারমশাই বললেন, সেশনের মাঝে হোষ্টেল পাবি না। ঘর ভাড়া নিয়ে চারজনে থাক। পরীক্ষা এসে গেছে। কাছাকাছি থাকিস তিনটি মাস। রেজাল্ট ভালো হবে।
ঘুরে ঘুরে অবশেষে ভাড়া ঘর পেলাম। কিন্তু বাড়িওয়ালার পাশের প্রতিবেশি বললেন, সাবধান ওই বাড়িতে ভূত আছে। আমরা ভয় পেয়ে তিনজনে বলে উঠলাম, তাহলে অন্য ঘর দেখি চল।
বিশু বললো, টাকা দেওয়া হয়ে গেছে। ভূতের বাড়িতেই থাকবো। বিশু যখন সঙ্গে আছে, ভয় কি তোদের।
তার অভয় বাণী ভরসা করে আমরা মাল পত্তর নিয়ে ঢুকে পড়লাম লড়াইয়ের কোর্টে। ক্যাপটেন বিশু বাড়িটা এক চক্কর পাক দিয়ে হাতে একটা লাঠি নিয়ে বললো, চলে আয় ভূতের বাচ্চা। আমরা ওর সাহস দেখে অবাক হতাম। রমেন বলে উঠলো, ভূতের শেষ দেখে ছাড়বো। জীবনের মরণের ভয় একটু বেশি। সে কাঁপা গলায় বলে উঠলো, যদি গলা টিপে ধরে ভূত। বিশু বললো, ভয় নেই, আমি একাই একশো। তোর কিছু হবে না। হলে আমার হবে।
এই বাড়ির নিচু তলায় কিছু অসামাজিক লোকের কাজকর্ম বিশু এক সপ্তাহের মধ্যেই টের পেয়ে গেলো। তারাই এই ভূতের ভয় দেখায়। একদিন জীবন বাথরুম গেছে এমন সময় নাকি সুরে একজন বলে উঠলো, এঁখান থেকে পাঁলা। ঘাড় মটকে দেবো। আবার একদিন রমেন ভয় পেলো। ঠিক সেই বাথরুমে। বিশু তদন্ত করে দেখলো বাথরুমের ভেন্টিলেটার ভেঙ্গে একটা সরু দড়ি ঢোকানো হয়েছে। বাইরে গিয়ে দেখলো দড়িটা নিচের ঘরের বারান্দায় শেষ হয়েছে। বাথরুমে ভাঙ্গা কাঁচে টান পরলে বিকট আওয়াজ হয়। আর মুখ বাড়িয়ে মুখোশ পড়ে নাকি সুরের কথায় সকলেই ভয় পাবে। বিশু বললো সবাই তৈরি থাকিস। আজ রাতেই ভূত ধরবো।
আজ আর কেউ স্কুল গেলাম না। একটা উত্তেজনা রাতে জাগিয়ে রেখেছে। এবার সেই বিকট শব্দ। বিশু বাঘের মতো লাফিয়ে লাঠি হাতে নিচের তলায় গিয়ে জলজ্যান্ত ভূতের পাছায় লাঠির আঘাতে ভূতকে কাবু করে ফেললো। ভূত বাবাজি জোড় হাতে বলছে, ছেড়ে দাও বাবা আমি আর ওসব করবো না। ভূতের সঙ্গিরা সব পালিয়েছে, আমাদের হাতে লাঠি দেখে। বিশু বললো, যাও, যেখানে বিশু আছে সেখানে চালাকি করার চেষ্টা কোরো না। বিপদে পড়বে।
তারপর থেকে আর কোনোদিন ভূতের উপদ্রব হয়নি সেই বাড়িতে।
সৌম্য বলে, বিশুর বাহাদুরি দেখেই আমরা সাহসী হয়ে উঠেছিলাম। বিশুর সঙ্গে আমরা বেরোলে সকলের চোখেমুখে একটা সাহসের,শান্তির ছাপ ফুটে উঠতো। পাড়ার কোনো মানুষ বিপদে পরলে বিপদের বন্ধু এই টাইগার বিশুকেই স্মরণ করতো। তার সঙ্গে আমরা তো থাকতাম অবশ্যই। রমেন, জীবন,বিশু,আমি একবার বন্যার সময় নৌকা করে মানুষের খাবার জোগাড় করতে চড়খী গ্রামে গিয়েছিলাম। হেলিকপ্টার থেকে চিড়ের বস্তা,গুড়ের বস্তা ফেলছে চড়খীর ব্রীজে যার আসল নাম কাশীরাম দাস সেতু। সেখান থেকে আমরা চিড়ে, গুড়ের পাটালি নৌকায় তুললাম। রমেন পেটুক। বললো, একটু টেষ্ট করলে হয় না। বিশু বললো, এখন এটা সকলের সম্পত্তি। যা হবে সকলের সামনে হবে। কেউ হাত দিবি না। এখন তাড়াতাড়ি চল। বান বাড়ছে। বিশু দাঁড় টানেআর আমরা সবাই সাহায্য করে নৌ্কা ও খাবার নিয়ে চলে এলাম নতুন পুকুরের পাড়ে। সেখানে বাড়ি বাড়ি সকলকে সমানভাবে খাবার ভাগ করে দিলো বিশু। তারপর আমরা বাড়ি এসে জীবনের মায়ের হাতের রান্না, গরম খিচুড়ি আর পেঁপের তরকারি খেলাম। অমৃতের স্বাদ। বিশু বললো, কাকীমা অনেক পেঁপে গাছ পড়ে গেছে বন্যার স্রোতে। আমরা আপনাকে অনেক পেঁপে এনে দেবো। সেবার বন্যায় পেঁপে, গ্রামের লোকের প্রাণ বাঁচিয়েছিলো। আমাদের গ্রাম অজয় নদীর ধারে। গ্রামগুলিও খুব নীচুস্থানে অবস্থিত। নদীর নাব্যতা বা গভীরতা অল্প। ফলে বন্যা প্রায় প্রতি বছর দেখা দিয়ে যেতো। জল যখন কমে যেতো তখন তোতনের মা ও পাড়ার মা বোনেরা মাঠে মাছ ধরার জন্য যেতো। নানারকমের শাক, ঢোল কলমি, শুশুনি তুলতো। খুব ভালো লাগতো নানারকমের মাছ ভাজা খেতে। আমি দেখলাম,
তোতনের মা মাঠ থেকে দুই তিন রকমের শাক তুলেছে। ওরা ভিটামিন বোঝে না, শরীরচর্চ্চাও বোঝে না। ওরা জানে খাটবো, রোজগার করবো আর খাবো পেট ভরে। মাঠেই পাওয়া যেতো বেশির ভাগ শাক, সব্জী।
, খলসে, ওআরও নানারকমের মাছ মাঠের জলে সাঁতার কেটে বেড়াতো।
বেলে, তে চোখো,চ্যাঙ,ছিঙুরি,গচিমাছ ছাড়াও ছোটো কাঁকড়া তাল কাঁকড়া পাওয়া যেতো। গর্তে হাত ঢুকিয়ে বিশু অনরকবার তআল কাঁকড়া বের করে আমাদের দেখিয়েছে।
পাঁকাল,গুঁতে,কৈ,মাগুর,ল্যাটা প্রভৃতি অসংখ্য মাছ। বিত্তি পেতে দিতো স্রোতের মুখে।
সৌম্য বলছে, খাল কেটে মাঝখানে বিত্তি পেতে জল যাওয়ার নালা কেটে দিতো। মাছ লাফিয়ে ওই গর্তে পড়তো। টানা জাল,পাতা জাল দিয়ে মাছ ধরতো। এখন তোতনের মায়ের জায়গায বৌমা মাঠে যায়। কিন্তু কৃষিকাজে সার, ওষুধ প্রয়োগ করার ফলে সেইসব মাছ ইতিহাসের পাতায় চলে গেছে। শাকপাতাও পায় না মা বোনেরা। এখন সব বাজারমুখী।। তখন শাক আঁচলে করে নিয়ে গিয়ে বাউরীবউ মুড়ি নিয় আসতো চাষি বাড়ি থেকে। মাঠের টাটকা শাক সবাই নিতো জলের দরে। আজ আর টাটকা কিছু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সৌম্যর কথা একশো শতাংশ সত্য। এখন আমরা বড় হয়ে গেছি। কিন্তু, স্বর্ণ যুগের সেইসব স্মৃতি মনের মণিকোঠায়চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
সে বলে পড়াশোনা আমার ভালোবাসা। মানুষ আমার দেবতা। মাষ্টার ডিগ্রী কমপ্লিট করে আমি বি,এড করেছি। তারপর স্কুল সার্ভিস পরীক্ষা দিয়েছি। তিন মাস পরে রেজাল্ট। দেখতে দেখতে তিন মাস কেটে গেল। তারপর
সৌম্য এস এস সি পরীক্ষার ফলাফল জানতে বর্ধমান গেল।
আজ রেজাল্ট বেরোবে। তার কোনো চিন্তা নেই। ভাল পরীক্ষা হয়েছে। ফল নিশ্চয়ই খারাপ হবে না। এইসব চিন্তা করছে। বেশ ভিড়। সবাই আগে দেখবে। সৌম্য স্থির হয়ে একটা গাছের ছায়া দেখে বসল। মনে তার ঈশ্বরচিন্তা আপনা আপনি, নিজে থেকেই চলে আসে। যার এই ভাব আছে সেই একমাত্র বুঝতে পারে। সৌম্য প্রাণায়ামের মত দুটো দীর্ঘশ্বাস নিল প্রাণভরে। এবার সে আরও শান্ত হল।
এবার লিষ্টে নাম দেখার ভিড় কমেছে। সৌম্য ধীরে এগিয়ে গেল তালিকার দিকে। চোখ বুলিয়ে সে তার নাম দেখতে পেল না। তার রোল নাম্বার নেই। মানে, মাষ্টারি আর তার হল না।
তারপর ভাবল, আর একবার দেখি। এবার প্রথম থেকে শুরু করল। সে দেখল, একেবারে এক নম্বরেই তার নাম। বিশ্বাস করতে পারছিলো না। আবার ভাল করে মিলিয়ে দেখল। হ্যাঁ, তারই নাম। এবার অন্তরের উত্তজনা নিয়ন্ত্রিত করে সে বাড়ি এল। বাড়িতে খুশির হাওয়া বয়ে গেল।
এখন সৌম্য বিয়ে করেছে। সন্তান আছে একটি। স্ত্রী আছেন। বাড়ির সকলকে খুশি করার জন্য সে সংসারী হল। এখনও মাইনের পয়সায় সে দানধ্যান করে গোপনে।
বাড়ির কাছে অট্টহাস সতীপীঠে তার সময় কাটে সুন্দর। এই তো কয়েকদিন আগেই রক্তদান শিবির হল অট্টহাসে। লক্ষ লক্ষ টাকার বস্ত্র বিতরণ করলেন সোনা মহারাজ। এখানকার সক্রিয় কর্মীদের পরিশ্রমে মানবসেবা হয় দিবারাতি। সংসারে থেকেও সন্ন্যাসী হওয়া যায়। সব কিছু নির্ভর করে মনের উপর। সব সময় আমার আমার, না করে অপরের জন্য হৃদয় কাঁদলে তবেই জীবন সার্থক হয়, একথা বলেন সোনা মহারাজ। জগতের মহান যজ্ঞে সৌম্যর জীবন নিবেদিত।
সৌম্য আজ সকালবেলা চলে গেল শিশিরভেজা এক ফাঁকা মাঠে। ওপরে খোলা আকাশ। কিন্তু সৌম্য আজ দেখল ফাঁকা আকাশে আজ কে যেন বাঁশি সাজিয়ে রেখেছে তার জন্য। বাঁশি, বাঁশি আর বাঁশি। সৌম্য জোরে ফুঁ দিল আর সঙ্গে সঙ্গেই বাঁশিগুলো এক অলৌকিক সুরে বাজতে শুরু করলো। ফাঁকা মাঠে বাঁশির সুরে সুরে ভরে উঠলো আসল বাদকের শিশির ধোয়া মন…