সুদীপ ঘোষাল

এক নারী ও রাজার কাহিনী: সপ্তম পর্ব

উপন্যাস
লেখাটি শেয়ার করুন

সুদীপ ঘোষাল,
পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ।

 

অনুপমা ছুটতে ছুটতে ঠাকুমার দেওয়া সোনাদানা নিয়ে রাজুর সঙ্গে দেখা কোরলো। রাজু তখন বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিলো। বন্ধুদের সঙ্গে রাজু পরামর্শ করে,  অনুপমাকে নিয়ে  সোজা চলে গেলো সিপাই দিঘির জঙ্গলে। বললো,কি এনেছিস দেখা। অনুপমা বললো,সব সোনা এনেছি। নে এবার চ। ও অনুপমাকে চুমু খেলো। জঙ্গলে শুয়ে ওরা নিশ্চিন্ত হলো। তারপর বিয়ের আগেই ওরা মিলিত হলো প্রচন্ড আবেগে। অনুপমা নগ্ন হয়ে রাজুর ওপরে উঠে দীর্ঘস্থায়ী খেলা খেললো। রাজু পাল্লা দিয়ে সাড়া দিলো প্রচন্ড শীৎকারে। রাজু ভাবছে,শালি  খানকির কায়দা কি করে শিখলো।খানকির বংশ তো।

হঠাৎ জঙ্গলে এলো কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা গুন্ডার দল। তারা বললো,এখানে তোরা কি করছিস। আমাদের আড্ডার কথা জেনে গেছিস রাজু। মেয়েটা কে রে?  বেশ ডবকা মাল। একবার দেখি, বলেই অনুপমার উদ্ধত খোলা বুকে হাত দিলো। টেনে ছিঁড়ে ফেলতে চাইলো তার মাইযুগল। একজন বললে,এক্কেবারে রেডি মাল। শালির রস গড়িয়ে পরছে।  শালা গরম গরম,হাতে গরম।

রাজু মুষ্ঠিবদ্ধ হাত চালিয়ে দিলো একজনের মুখে। রক্ত পড়তে শুরু করলো। একটা ডাল ভেঙ্গে মারতে আরম্ভ করলো। অনুপমা দেখলো রাজু সবাইকে চেনে।কারণ রাজু বলছে,শালা বন্ধু হয়ে মুখোশ পরে চালাকি,রাজুর সঙ্গে। তোদের থেকে বড় গুন্ডা আমি।  মুখোশধারী একজন বললো,আমরা তোর বন্ধু নই, যম।  ওরা বললো,মেয়েটাকে ছেড়ে দেবো ছিবড়ে করে। কিন্তু তোকে মরতেই হবে। ওরা দড়ি দিয়ে রাজু আর অনুপমাকে বেঁধে ফেললো। অন্ধকারে পাড়ার এই জঙ্গলে কেউ আসে না। একটা বড় পাথর দিয়ে থেঁতলে দিলো  বোধহয়, রাজুর মাথাটা।  রাজু চিৎকার করে থেমে গেলো।



অনুপমা কিছু দেখার আগেই মনে ভাবলো, রাজু হয়তো মরে গেছে। অতবড় পাথর দিয়ে মাথায় মারলে কি আর মানুষ বাঁচে। তবু একটা আশা। সে বলছে,ভগবান আমাকে মারো কিন্তু আমার রাজু  বেঁচে থাক। অনুপমা কিছু দেখতে পাচ্ছে না। তার বুকে নির্মম ভাবে আড়াল করে বসে আছে দুই নগ্ন পাষন্ড। তার বুকযুগল দলে,মুচড়ে ছিঁড়ে নিচ্ছে লম্পটের দল। রাজুর মরা মুখ সে ভাবতেই পারছে না। শুধু শুনতে পেলো,দে শালার মাথা থেঁতলে। কেউ যেনো চিনতে না পারে। তারপর নদীর জলে ভাসিয়ে দেবো। এই কথা শুনে অনুপমা ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো। সেই সুযোগে ওরা পাঁচজন অমানুষিক অত্যাচার করলো তার উপর। তারপর সবাই ওরা চলে গেলো,অনুপমাকে নগ্ন অবস্থায় ফেলে।

প্রায় দুঘন্টা পরে অনুপমার জ্ঞান এলো। দেখলো রাজুর দেহটা নেই। ওরা হয়তো গাড়ি করে নিয়ে গিয়ে অন্য কোথাও বা কোনো নদীতে ফেলে দেবে। সে রক্তমাখা শরীর নিয়ে উঠলো। বুঝতে পরলো পশুরা তার সব সম্পদ কেড়ে নিয়েছে। কোনোরকমে ছেঁড়া জামাটা পরলো।  ব্যাথায় টনটন করছে তলপেট। আর বাঁচার কোনো মানে হয় না রাজু নেই। পরে যাচ্ছে বারে বারে। সিপাই দিঘির এই জঙ্গলে আসতে মানা কোরতো ঠাকুমা। রাজু তাকে নিয়ে এলো। কতবার মানা করলাম শুনলো না। অনুপমা দেখলো দড়িটা ওর তার গলায় বেঁধেছিলো পশুরা কিন্তু সে মরে নি। টান করে বাঁধা তাও সে মরে নি। সে ভাবে মরে গেলেই ভালো হতো। ওরা হয়তো ভেবেছে,মরে গেছি আমি। দাদুকে মনে পরলো ওর। দাদু ডাকছে আর বলছে, গলায় দড়িটা শক্ত করে বাঁধ। ও আগে শুনেছে যাদের অপমৃত্যু হয় তারা এভাবেই ডাকে। অনুপমা দাদুকে বলছে,দাদু ওরা রাজুকে মেরে ফেলেছে।

তাহলে আমি বেঁচে কি করবো। আমি তোমার কাছে যাবো। দাদু ডাকছে, দাদুর কথা শুনতে পাচ্ছে ও। দাদু ডাকছে,আয় আমার হাতে লাগানো বাড়ির আমগাছে আয়। ওখানেই ঝুলে পর। আমি আছি,আয়,আয়। অনুপমা ভাবের আবেশে বাড়ির উঠোনে এলো। এখন অন্ধকার রাত। মনেও কালো অন্ধকার, অনুপমার অন্তর জুড়ে,চাপ চাপ কালোর দলা পাকানো রক্ত। নীচু ডালে পা দিয়ে উঠে পরলো গাছে। দড়িটা শক্ত করে বাঁধলো ডালে।কোনোদিন কঠিন কাজ সে করেনি। কি করে দড়ি বাঁধলো সে নিজেও বুঝতে পারলো না। অবশেষে রাজুকে মনে করে ঝুলে পরলো ডাল থেকে।



সকালবেলা অনুপমার ঠাকুমা কাঁদতে শুরু করলো।মরা কান্না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখে, গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে নগ্নপ্রায় নাতনি। ঠাকুমা দেখলো,অনুপমা গলায় দড়ি দিয়েছে দাদুর মতো। আর দেখলো পাড়ার সবাই ভিড় করে এসেছে তার নাতনিকে দেখতে। ভিড়ের মাঝে রাজুকে দেখতে পেলো ঠাকুমা। রাজু বলছে,ঠাকুমা এই অভিশপ্ত আমগাছটা কেটে ফেলতে হবে। অনুপমার ঠাকুমা বলে,তোমার সঙ্গে কাল দেখা হয় নি অনুপমার। রাজু বললো,না তো,আমি কাল একটু মামার বাড়ি বেড়াতে গেছিলাম। আসতে অনেক রাত হয়ে গেছে।
—-কিন্তু ও যে বললো,তোমার কাছে যাবে।

—–না,ঠাকুমা, আমাকে তো বলেনি কিছু।

—–না,ও আমাকে বলে বাড়ি থেকে বেরোলো। আমার কাছে সোনাদানা নিয়ে বললো,আমি রাজুর কাছে যাচ্ছি। তোমার কোন পাড়ায় বাড়ি বাবা।

—–ও আপনি চিনবেন না। আমরা একই স্কুলে পড়তাম। ছোটোবেলায় এই বাড়িতে কত খেলেছি। আপনিও তো আমাকে দেখেছেন।

—–ঠাকুমা বললেন, হ্যাঁ দেখেছি। আমি সব জানি। কিন্তু ও গলায় দড়ি দিলো কেন?
—–ঠাকুমা, সোনা দিয়েছেন ওকে। ও একা একা অন্ধকারে বেরিয়ে গেলো। আপনি ভুল করেছেন ঠাকুমা। সোনাদানা আর অন্ধকারে একা যুবতী মেয়ে। না না, ঠাকুমা এটা আপনি ঠিক করেন নি। পাড়ার লোক বলুক। আপনি ভাবুন তো একবার।

রাজু দেখলো ওর পাশে ওর সব শাগরেদ হাজির। ওদের দেখে ডাকাতের ছেলে রাজুর সাহস বেড়ে গেলো। বাপকা বেটা..বললো,শুনুন ঠাকুমা পুলিশ যদি জানে,আপনি নিজে সোনা দানা সমেত একটা যুবতী মেয়েকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছেন, তাহলে ঝামেলা হবে। তারপর পুলিশ এলে পোষ্টমর্টেম হবে। যদি রেপ হয়েছে বুঝতে পারে আপনার নাতনির বদনাম হবে। কাগজে,কাগজে ছেপে যাবে আপনার বাড়ির ইতিহাস। আপনার পরিবারের ইতিহাস। আপনার সমগ্র ইতিহাস।

—–তা হলে কি করা যায় বলো তো। মেয়েটা তো মরেই গেছে। তাছাড়া আমি বুড়ি। এই বয়সে আমি অত ধকল সইতে পারবো না। তুমি যা ভালো বোঝো করো। আমাকে বাঁচাও।



—–ঠিক ভেবেছেন আপনি। আমার উপর ভরসা রাখুন। আমি দিল দিয়েছিলাম ওকে। আমার কথা মনে করলো না ও। কি নিষ্ঠুর তুমি অনুপমা।
ঠাকুমা রাজুর চোখ মুছিয়ে দিলেন। বললেন,যা হয়েছে,তা আর ফিরে আসবে না। তুমি পাড়ার লোক ম্যানেজ করে তাড়াতাড়ি শ্মশানে নিয়ে যাও।
রাজু তার দলবল নিয়ে পাড়ার লোকদের বললো,আপনারাই বলুন। একা বুড়ি মানুষ পুলিশের ঝামেলায় যেতে চাইছে না। তাহলে আমরা কি মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যাবো। পাড়ার সব লোক ফিসফাস করলো। কেউ ঝামেলায় থাকবে না। একজন বয়স্ক মহিলা বললেন,নিয়ে যাও,ওর ঠাকুমাই তো মালিক। উনি যা বলবেন,তাই করো। আমাদের আপত্তি থাকবে কেন?

রাজু ভাবছে এখনও  শালি, বুড়িটা টাকা দিলো না। মদ, মাংস খেতে হবে। পাড়ার লোক,বন্ধু,বান্ধব,শ্মশান খরচ খানকি বুড়ি…
—–তা হলে, ঠাকুমা, চাঁদা তুলি।
——আরে, ছি, ছি বলো কি? টাকার কোনো অভাব নেই। যত লাগে দেবো। সব তো নাতনির জন্যই রাখা আছে।
দশ মিনিট পরে ঠাকুমা রাজুর হাতে কুড়ি হাজার টাকা দিলেন। বললেন,আরও লাগলে দেবো। টাকার কোনো অভাব নেই।
রাজু টাকা নেয় আর ভাবে,শালি,আমার বাবার কাছে ঝারা মাল। আমার বাবাকে খুন করেছে তোর স্বামী। তার ফল ভোগ কর শালি,খানকি।

তারপর হাসি হাসি মুখে বলে,আর কোনো চিন্তা নেই। আপনি চেয়ারে বসে দেখুন।



রাজুর নেতৃত্বে তার দল আমগাছে উঠে লাশ পারলো। ট্রাকটর চলে এলো। কুড়িজন লোক সঙ্গে করে চলে গেলো শ্মশানে।
বন্ধুকে আড়ালে বলছে রাজু,শালা এবার বুড়ির পালা। তারপর ওই জায়গায় গজিয়ে উঠবে আমাদের আড্ডা। শালা প্রথমে ক্লাব হবে,পাশে মন্দির হবে।

রাজু বলে উঠলো,বল্লো হরি…
সবাই সমস্বরে বলে উঠলো,হরিবোল…

আবার বল্লো,…

এক নারী ও রাজার কাহিনী: শেষ পর্ব


লেখাটি শেয়ার করুন

One thought on “এক নারী ও রাজার কাহিনী: সপ্তম পর্ব

Leave a Reply