লিটন রায়

ঋতুবৈচিত্র্য

গল্প, ছোটগল্প
লেখাটি শেয়ার করুন

লিটন রায়।।

 

একসময় ধরা ও প্রকৃতি ভালো বন্ধু ছিল। তার দুজনে মিলে দুজনকে সাজাতে থাকলো, তাদের সৃষ্টির দ্বারা। অপরূপ সুন্দর্য,মাধুর্য ও প্রীতিময় হয়ে গেল ধরা ও প্রকৃতি। কিন্তু বেশ কয়েকদিন পর তাদের রূপসৌন্দর্য্য নষ্ট হতে থাকলো। তারা কী করবে ভেবে পাচ্ছিল না। তারা এ ক্ষয়ক্ষতির জন্য সূর্য ও রাত কে দায়ী করলো। কারণ সূর্য তাদের সকল সৃষ্টিকে পুড়ে ফেলছিল আর রাত কখনোই আলো দিচ্ছিল না তাদের সৃষ্টিকে। একদিকে সকল সৃষ্টি পুড়ছে অন্যদিকে বরব হয়ে অন্ধকারে পরে আছে। তাই ধরা ও প্রকৃতি ঈশ্বরের শরণাপন্ন হলো। তারা ঈশ্বরকে বললো, হে প্রভু আমরা বিচার চাই। তুমি আমাদের সৃষ্টি করলে আমাদের রূপসৌন্দর্য্য সৃষ্টির ক্ষমতা দিলে কিন্তু এভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে সূর্য ও রাত। এদের বিচার করুন এবং আমাদের রূপসৌন্দর্য্য রক্ষা করুন। ঈশ্বর হেসে হেসে বললেন_ রাত ও সূর্য তোমাদের কিচ্ছু ক্ষতি করছে না। তারা তো সুধু আমার কথা মতো তাদের দায়িত্ব পালন করছে। এ কথা শুনে প্রকৃতি বললো_তাহলে কি এভাবে আমার সৃষ্টি শেষ হয়ে যাবে। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার কি কোনো উপায় নেই? ঈশ্বর বললেন_ উপায় আছে। ধরা, তুমিই পারো সকল সমস্যার সামাধান করতে। আমি শুধু সময় আবিষ্কার করলাম আর তোমাতে জুরে দিলাম। তুমি এই সময়ের অর্ধেক ক্ষণ পরপর তোমার পৃষ্ঠ পরিবর্তন করবে। ধরা ও প্রকৃতি সামাধান পেয়ে অনেক খুশি হলো। ধরা ঈশ্বরের কথা মতো পৃষ্ঠ পরিবর্তন করে এতে প্রকৃতির সৃষ্টি অর্ধসময় আলো আর অর্ধসময় আঁধার। এতে রূপসৌন্দর্য্য রক্ষা পেলো।

বেশ ভালো মতো কাটছে সময়। কিন্তু কিছুদিন পর সৃষ্টির রূপসৌন্দর্য্য নষ্ট হতে শুরু করলো। তারা আবার বিস্মিত হয়ে গেলো। তারা কি করবে,আবারও ঈশ্বরের শরণাপন্ন হলো। ঈশ্বরকে বললো_ঈশ্বর আমাদের রূপসৌন্দর্য্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কী করবো বলুন দয়া করে! তখন ঈশ্বর প্রকৃতিকে বর দিলো। বর দিলো যে, আমি তোমাদের ছয়টি ঋতু দিচ্ছি। যখন যেখানে প্রয়োজন ঠিক তখন তোমরা এই ছয়টি  ঋতুকে কাজে লাগাতে পারবে। আর এই ঋতু তোমাদের সৃষ্টির বিকাশে সহায়তা করবে।



ধরা প্রকৃতি প্রথমে গ্রীষ্ম ঋতুকে আহ্বান করলো। তখন দিন হয়ে গেল বড় রাত হয়ে গেল ছোটো। আর দিনে প্রচণ্ড গরম এভাবে চলতে থাকে। রাস্তাঘাট নদী নালা খালবিল সব শুকিয়ে চৌচির। অনেক রকম বিচিত্র সৃষ্টি নিয়ে এসেছিল এই ঋতু। প্রায় দুইমাসের কাছাকাছি সময়ে তারা দেখলো  এভাবে চললে সৃষ্টি টিকবে না। তাই দ্বিতীয়বার তারা প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচার জন্যে বর্ষা ঋতুকে আহ্বান করলো। বর্ষা এসে প্রকৃতির বুকে বৃষ্টি নিয়ে নিয়ে আসে বিচিত্র পরিবর্তন। রাস্তাঘাট কাঁদোকাঁদো করে পুকুরডোবা পানিতে থৈথৈ। এভাবে চলতে থাকলে ধরা ও প্রকৃতি পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।

তাই তৃতীয়বার শরৎ ঋতুকে ডাকলো প্রকৃতি। শরৎকাল নিয়ে এলো রানীর মতো বিচিত্র রূপ। নদীতে কাশফুল, নৌকাভরা জেলে মাছ ধরতে ব্যস্ত। নীল আকাশ অনেক রকমের ফুল যেনন, বকফুল, গগনশিরিষ, হিমঝুরি ফুল, শেফালি, শিউলি, নদীর ধারে কাশফুল শিশির ভেজা ঘাসফুলপাখিফুল, পান্থপাদপ, খালের বিলে শাপলা ফুল ইত্যাদি।

এরপর তারা হেমন্ত ঋতুকে আহ্বান করলো। হেমন্তও নিয়ে এলে বিচিত্রময় রূপসৌন্দর্য্য পাকাধানে, সোনালি রূপে বাংলা সাজে। নবান্ন উৎসবে মুখরিত বাংলা যেন রানীর মতোই হেমন্ত কে বলে ঋতুর রানী। এর পরে শীত ঋতুকে আহ্বান করা হলো। শীত নিয়ে এলো কুয়াশা ঘেরা সকাল কনকনে ঠান্ডা, অনেক রকমের শাকসবজি ও ফলমুল, ঝেড়ে ফেলে গাছের পাতা। সবশেষে আহ্বান করা হয় বসন্তঋতুকে। এই ঋতু পরিপূর্ণ রূপে ফিরে আসে। সকল অপুর্ণতার রূপ পুর্ণতা দান করে। এই ঋতু গাছের ঝড়ে যাওয়া পাতাকে ফিরিয়ে দেয়। ধরিয়ে দেয় ফুল আমার মুকুল। হিমেল হাওয়া পাখিদের গান। অনেক রকম ফুল যেমন; বেলি,পলাশ, নয়নতারা, দোলনচাঁপা, কৃষ্ণচূড়া, সজনাফুল ও নেবুর ফুল ইত্যাদি। বিশেষ করে দারুণ রাখে সরিষাক্ষেত হলুদে হলুদ। পুরো প্রকৃতিটাকে চিরসবুজ করে রাখে এই ঋতু। তাইতো এই ঋতুকে ঋতুরাজ বলে।

এভাবেই এসেছে ঋতুবৈচিত্র্য আর এভাবেই ধরা ও প্রকৃতি তাদের সৃষ্টিকে টিকে রেখেছে।



লেখাটি শেয়ার করুন

Leave a Reply