মিলনের পথে 6,7,8

মিলনের পথে: ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম পর্ব

উপন্যাস
লেখাটি শেয়ার করুন

সুদীপ ঘোষাল,
পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ।

 

ছয়

শােভন অশােককে নিরালায় পেয়ে বীথিকার কথা জিজ্ঞাসা করলাে। শােভন একদিন সােনাদিঘী আসবার সময় অপর্ণার সঙ্গে একটি মেয়েকে দেখেছিল। সেই মেয়েটির সাথে এই মেয়েটির অনেক সাদৃশ্য আছে। তাই কৌতুহল বশে শােভন বললাে, অশােক অপর্ণার সাথে এই মেয়েটি কে? অশােক বীথিকার সমস্ত পরিচয় শােভনকে বললাে। অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছে। সকলেই নৃত্যানুষ্ঠান দেখতে ব্যস্ত। কিন্তু শােভন বীথিকাকে প্রায় সর্বক্ষণই নিরীক্ষণ করল। অনুষ্ঠান শেষে বাসের সীটে একদিকে বীথিকা ও শােভন বসল । অন্যদিকে অশােক, দেবীকা ও অপর্ণা বসেছিলাে। শােভন বীথিকার সাথে কথা বলার অনেক চেষ্টা করেও বলতে পারলাে না। বীথিকা অপর্ণার সঙ্গ হারাবার ফলে খুবই বিব্রত বােধ করল।

কিন্তু শােভনের মতাে এতাে লাজুক ছেলে সে আর কখনও দেখেনি। কি সুন্দর তার চোখ, উন্নত ললাট। বীথিকা শােভনের দিকে তাকিয়ে চোখ ফেরাতে পারলাে না। শােভনের সাথে চোখাচোখি হতেই লজ্জায় সে মুখ নীচু করল। কিছুক্ষণ পরেই রূপাডিহি এল। শােভন, দেবীকা নেমে পড়ল। দেবীকা, অপর্ণা ও অশােককে বিদায় জানালাে কিন্তু শােভন যেন সব ভদ্রতাই ভুলে গেল।শােভনদের বাড়ী দীর্ঘদিন আসা যাওয়ার ফলে অশােক ও শােভনের বােন দেবীকার সঙ্গে একটা প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলাে যে সংবাদটি উভয়পক্ষের পিতামাতারা তথা গ্রামের লােক সকলেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।গতকাল রাত্রিতে বাড়িতে ফিরে এসে বীথিকার মন অজানা এক আনন্দে ভরে উঠলাে।



সেই রাত্রিতে সে রবীন্দ্র সংগীতের সুর গাইতে লাগলাে। “তোমার  হল শুরু, আমার হল সারা “। বড় দাদা ঠাট্টা করে বললেন, কি রে আজ তাের কলেজ ফাংশান দেখে শিল্পী হবার সখ হল নাকি।

– হ্যাঁ  বড়দা। সেইরকমই মনে হচ্ছে।

সকালে শয্যাত্যাগ করে কাজকর্ম কিছু করে প্রথমেই বীথিকা দেবীকার বাড়িতে গেল।

এত সকালে বীথিকাকে দেখে দেবীকা অবাক। বললাে, কি এত সকালে কি ব্যাপার? বীথিকা গতকাল রাত্রির সকল কথা বলে এবং শােভনের প্রতি তার আসক্তির কথা দেবীকাকে জানাল।। দেবীকা প্রত্যুত্তরে বললাে, ধীরে বন্ধু ধীরে। বীথিকা বাড়ীতে ফিরে এসে বিছানায় দুপুরে শুয়ে এক সুন্দর স্বপ্ন দেখলাে। দেখলাে শােভন তার সামনে দাঁড়িয়ে। শােভনের লাজুক লাজুক চোখ আর সুন্দর অবয়ব সে সামনে দেখতে পেল। কল্পনা করলাে মনে মনে সুন্দর এক জীবনের।

 

সাত

সে একদিন তাকে নিজের করে নিয়ে, তার ঘরে, তার মনে আশ্রয় দেবে। তার সবরকম সুখ স্বপ্ন সত্যি হয়। বীথিকা সেনকে নিয়ে যে স্বপ্ন সে  রচনা করছে তাও হয়ত শত হবে। যদি তা পবিত্র হয় যদি সেটা খাঁটি হয়। অনেকে  কি পেতে চায়। চাইলেই হয়ত পায় না। কিন্তু কিছু মানুষ তাে পায়। শােভনের প্রতি যে এখন, যে ভালোবাসা বীথিকার মনে জমে উঠেছে তা যদি একটু একটু করে শােভনের মনে জাগে তারপর কি তার স্বপ্ন সফল হবে না। একটু আশা, একটু বাঁচার ইচ্ছা এই আশাতে সংসার। সেই আশা বুকে রেখে বীথিকা শােভন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল জীবনজয়ের।  গােপালবাবু যাত্রাদল গঠন করে গ্রামে এমনকি অনেক শহরে পর্যন্ত অভিনয় করে বেড়ান। তার দলের নাম এই অঞ্চলে সকলেরই পরিচিত।



অভিনয় গােপালবাবুর পেশা ছিল না, নেশা ছিল। কিন্তু দলে অনেক বেকার ছেলে তথা দরিদ্র ঘরের ছেলে ছিল। তাই গােপালবাবু যাত্রাদলটিকে সুসংবদ্ধভাবে গড়ে তােলার জন্য একটি পেশাদার দল গঠন করতে চাইলেন। দলের প্রত্যেক সদস্য গােপালবাবুর এই সিদ্ধান্তে খুশী না হয়ে পারলেন না। বিশেষ করে অরিন্দমের মতাে বেকার ছেলেদের তাে কথাই নেই। গ্রামের নামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যাত্রাদলের নাম রাখা হলাে, রূপা অপেরা। গােপালবাবু নিজের গ্রামে তার অর্থ দিয়ে একটি যাত্রাদল গঠন  করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। দলের প্রত্যেককে অর্থ নেবার জন্য আপত্তি করলেন। কিন্তু গােপালবাবু বললেন, এটা পেশাদারী দল, তাই অর্থ নেবার মানসিকতা প্রথম থেকেই শুরু হওয়া উচিত।

 

আট

যাত্রার দিন প্রথম থেকেই পরিচ্ছন্নভাবে পেশাদারী দলের মতাে সবকিছুর ব্যবস্থা করা হলাে। সকলেই ব্যস্ত, যেন এক মহাযজ্ঞ এক্ষণি শুরু হবে। গােপালবাবুর প্রধান শিষ্য অরিন্দম রায়, তাই অরিন্দম অভিনয় শুরু করার পূর্বে গােপালবাবুর চরণধূলি গ্রহণ করে। গােপালবাবু সবকিছু জ্ঞান অরিন্দমকে উজাড় করে ঢেলে দিতে চান। তিনি অরিন্দকে গড়তে চান মনের মতাে এক অভিনেতা হিসাবে। ভালাে অভিনয় করার মানসিকতা, যােগ্যতা অরিন্দমের সত্যিই আছে।। | গােপালবাবুর মতাে একজন দূরদর্শী মানুষের অনুমান কখনাে ভুল হতে পারে না। তাই পরের দিন সকলের মুখে মুখে এক নাম, এক ভাষা। অরিন্দমের সত্যি এমন মন ভােলানাে পাঠ জীবনে ভুলতে পারবাে না। অরিন্দম আপন মনে চলেছিলাে একটা কথা চিন্তা করতে করতে, যে ফটোটি অরিন্দম সেদিন দেখেছিলো তার কথা।

অরিন্দমের কাছে এল। চিন্তা করলো কে তাকে অভিনীত চরিত্রের নাম ধরে ডাকলো। পিছন ফিরে দেখ সেই মেয়েটি যাকে সে একবার যাত্রা করতে করতে দেখেছিলাে, আরে স্যার আপনার ছবি দেখেছিলাম । আপনার ব্যথা’ কথাটি বলেই চুপ করে গেল মেয়েটি।

অরিন্দম বলল – কিসের ব্যথা ছিল।কেন কাল রাত্রির কথা ভুলে গেলেন নাকি?

– আরে ওটা অভিনয় ছাড়া আর কিছু নয়। মেয়েটি ধন্যবাদ বলে চলে যাচ্ছিলাে। অরিন্দম ডাকল।

-শুনুন একটা কথা বলুন মেয়েটি বলল। আপনাকে তাে চিনতে পারলাম না।

-আমি আপনার গুরুদেবের একমাত্র কন্যা।  বাইরে ছিলাম। সাত দিন হল এসেছি। কথা বলেই মেয়েটি একপ্রকার দৌড়েই চলে গেল।



গােপালবাবুর মেয়ে আছে অরিন্দম জানতাে না তাই কৌতুহলবশত অতি গােপালবাবুর বাড়ি গেল। গােপালবাবুর বাড়িতে এতদিন অরিন্দম যাওয়া আসা করছে কিন্তু গােপালবাবুর  সাংসারিক খবর সে কিছুই রাখতাে না। উচিতও নয় ভেতরে যাওয়ার। গােপালবাবুও তাকে কিছু বলার প্রয়ােজনবােধ করেন নি। অরিন্দম তার কাছে খুবই ঋণী কিন্তু তার সবরকম খবর না জানাতে সে লজ্জিত হল।


লেখাটি শেয়ার করুন

Leave a Reply