শয্যাশায়ী
মোঃ শরিফুল ইসলাম
পঞ্চান্ন বছর বয়সে এসে খুব আজ মনে পড়ে
কতো ঘুরেছি পাড়ায় পাড়ায় বাবু সোনা কোলে নিয়ে।
কতো হেঁটেছি পথে পথে দু পা ফেলে পথে
দৌড়েছি কতো মাঠে মাঠে আমি সুজন সখিদের সাথে।
পা মিলায়ে ঘরের দুয়ারে সেলাই করেছি কাঁথা
কতো বু এসে পান খেয়েছে সেচিয়া বাটায় পাতা।
স্বামীর জন্য নিয়াছি কতো মাথায় করিয়া ভাত
কতো গল্পে স্বজনের সাথে রাত হয়েছে প্রভাত।
কতো গিয়েছে শহর বন্দরে দেখিয়াছি কতো কি
ঢোল তবলা ডুগডুগির সুরে কতো আমি নেচেছি।
শাড়ি চুড়ি পরিয়া যৌবনকালে করিয়াছি কতো সাজ
কতো যে জোয়ান আসিয়া মোরে দেখিতো এ সাজ।
চাহিয়া থাকিতো ফ্যাল ফ্যাল করে আমার দিকে চেয়ে
মন কাড়িয়া নিতে আমার তারা কতো গান যেতো গেয়ে।
স্কুলে যেতাম ব্যাগ কাঁধে নিয়ে সখা সখিদের সাথে
গল্প করিতাম ফুল পরীদের হাত রেখে মোরা হাতে।
বাগানে গিয়ে ছিড়ে খেয়েছি কতো জনার গাছের ফল
পাড়ায় পাড়ায় খেয়েছি কতো নানান টিউবওয়েলের জল।
ঝাপ পেড়েছি পুকুরে পুকুরে আষাঢ়ের বৃষ্টির দিনে
পুতুল পুতুল খেলেছি কতো পাড়ার শিশুদের সনে।
ছেলে মেয়েদের জন্য আমি করেছি কতো শ্রম
ওদের সুখের জন্য চোখের হারাম করেছি ঘুম।
পেটে যখন এসেছে সন্তান কতো হয়েছে বুমি
খেতে না পেরে কষ্টে হতো তবুও হয়নি গোস্বামী।
দশ মাস যখন পূর্ণ হলো উঠিলো দেহে বেদনা
এ পাশ ও পাশ করি আমি সইতে আর পারিনা।
খাওয়া দাওয়া মোর বন্ধ হইলো গেলাম বিছানায় পরে
সবার কাছে ক্ষমা চাই আমি যাবো বুঝি এবার মরে।
প্রভুর কাছে দুহাত তুলে বলি হে দয়াময়
আমারে তুমি লইয়া যাও সন্তান করো সুস্থময়।
তুমি তো পারো সবই প্রভু নেই কিছুতে ত্রুটি
তোমার কাছেই চাই সব প্রভু তুমি ভরসার খুঁটি।
জন্মের যখন হইলো সময় তখন কি যে জ্বালা
সাদা বর্ণের চেহারা আমার বিষ ব্যাথায় হলো কালা।
মনে হয় আমার ছুরি দিয়া কলিজা করে ফেলি দেই ছিদ্রা
দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে চির ঘুমে যাই নিদ্রা।
বিষ বেদনায় ছটফট করি বলে মা সবুর কর
মা হওয়ার কি যে বেদনা জানে জগৎ ঈশ্বর।
ছটফট যখন করিতে লাগিলাম হাত পা ধরলো চেপে
মরে যাবো আমি বাঁচবো না আর প্রভুকে দিলাম সপে।
কিছু ক্ষণ পরে শুনিলাম কানে ওয়াও ওয়াও ডাক
কলিজা আমার শান্ত করিলো দয়ার আল্লাহ পাক।
কাছে নিয়া ধন করিলাম চুম্বন তুইতো আমার সব
তোরে কোলে পেয়ে ভুলিয়া গিয়াছি ব্যাথা বেদনা গব।
ঠান্ডা লাগিলে ছেঁকিয়াছি কতো খুড়ায় নিয়া আগুন
গায়ের রক্ত পানি করিয়া দুগ্ধ করাইছি সেবন।
মাঘ মাসে শীতে মাটিতে আমি রয়েছি একা পরে
বাবু সোনাকে রেখেছি আমি শুকনা কাঁথার উপরে।
যদি একটু কান্না করিতো দৌড়ে গিয়েছি ছোটে,
বুকের দুগ্ধ পান করাইছি দৌড়ে গিয়ে তটে।
অসুস্থ হলে দৌড়াইছি ডাক্তার কবিরাজের বাড়ি
ওঝা বোদ্ধ হুজুর দিয়ে নিয়ে আসিতাম ঝারি।
প্রসাব পায়খানা করতো যখন আমার কোলে ভরে
গন্ধ আমার লাগিতো না ফেলিতাম তাহা ধরে।
কতো জনে নাক ছিটকাইতো দেখিয়া এমন কাজ
ফেলে দে পাজিরে আছাড় মেরে করিতো গালাগাজ।
প্রতিবাদ করে বলিতাম আমি তোমারে হয়েছে কি
গাছের ফল গাছে কখনো হয়না তো ভারী।