Modhurima Guha Neogi

ফুড কনফারেন্স

বুক রিভিউ
লেখাটি শেয়ার করুন

Modhurima Guha Neogi

বই: “ফুড কনফারেন্স”
লেখক: আবুল মনসুর আহমেদ
পৃষ্ঠা: ১১৬

প্রথম কথা এই “ফুড কনফারেন্স” বইটি খাদ্যের দোষ-গুণ বিচার করার জন্য লেখা হয় নি। বইটি মূলত ১৩৫০ বঙ্গাব্দের মহামারী কে কেন্দ্র করে লেখা ৯ টি গল্প। বাংলাভাষায় satire বা ব্যাঙ্গাত্মক গল্প খুব কম লেখা হয়। satire culture টা কেনো যেন এই ভাষায় সেভাবে গড়ে ওঠেনি। “ফুড কনফারেন্স” আমার পড়া অন্যতম বাংলা ব্যাঙ্গাত্মক গল্প বা রম্য গল্প।

বইটির নয়টা গল্পের সবগুলোই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাংলার খাদ্য সংকট নিয়ে। প্রতিটি গল্পে লেখক মহোদয় ব্যাঙ্গাত্মক ভাবে তুলে ধরেছেন বাংলার আপামর জনগোষ্ঠীর খাদ্যাভাবে হাহাকার। তুলে ধরেছেন সেই সংকটময় পরিস্থিতিতে সমাজের কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের লোভ, নীতিনৈতিকতাহীনতা, দূর্নীতি আর বিভিন্ন সামাজিক অসঙ্গতি।

বইটির উপহাসের ক্ষেত্র হচ্ছে রাজনীতি, তাও আবার উপমহাদেশের রাজনীতি। এই এক বিষয়বস্তুই এই বইকে কালোত্তীর্ণ করার জন্য যথেষ্ট। বর্তমানে যুগ পাল্টেছে, প্রযুক্তি পাল্টেছে। পাল্টেছে সবই, কিন্তু পাল্টায়নি বাঙালির ঐ উপহাসের ক্ষেত্রের জায়গাটি। বইটি তাই আজও প্রাসঙ্গিক ; বোধ করি প্রাসঙ্গিক থাকবে বাঙালির জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত।

ফুড কসফারেন্স

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, বাংলা ১৩৫০ সনে (১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে) ভয়াবহ এক দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হয়। এই দুর্ভিক্ষকে নিয়ে দু’জন শিল্পী তাদের শিল্পকর্মে নিঁখুতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন- তাঁর তুলির আঁচড়ে, আর আবুল মনসুর আহমেদ- তাঁর satire এ।

হাস্যরসাত্মক ব্যঙ্গবিদ্রূপের মাধ্যমে আবুল মনসুর আহমেদ এই বইয়ে বাঙ্গালীর জাতীয় চরিত্রের বাস্তব প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছেন। জাতিগতভাবে আমরা কতটা নীচ এবং আমাদের মন-মানসিকতা কতটা হীন, তা ফুটে উঠেছে প্রতিটি গল্পের প্রতিটি লাইনে। নিজেকে নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করা, সব রেখে কেবল নিজের আখের গোছানোর চেষ্টা করা, ভবিষ্যতের কথা না ভেবে কেবল বর্তমানের আয়েশের জন্যে সব ধ্বংস করে ফেলা – হাজার বছরের বাঙ্গালী চরিত্রের সবকিছুই প্রকাশিত হয়েছে এই বইটিতে। “সায়েন্টিফিক বিযিনেস” গল্পের শেষ লাইনটি আমার কাছে বেশ মজার মনে হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে-
“বাঙ্গালি জাত যেখানে যেখানে বাস করেছে, হাইজিনিক মেযার হিসেবে সে সব জায়গায় বেশ করে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দাও।”

‘ফুড কনফারেন্স’ বইটিকে আবুল মনসুর আহমেদের শ্রেষ্ঠ পলিটিক্যাল স্যাটায়ারও বলা যায়। অন্নদাশঙ্কর রায় তো বলেছেনই, আবুল মনসুর আহমেদ ফুড কনফারেন্স লিখে অমর হয়েছেন। আসলেই, ব্যঙ্গাত্মক লেখার মাধ্যমে বাংলার তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও সমাজকে সেইসাথে সমাজের মানুষের চরিত্র যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তা নিঃসন্দেহে অনবদ্য। এই বইয়ের প্রতিটা গল্প বর্তমান সময়ের সাথে খুব বেশি প্রাসঙ্গিক। এই বইটি আসলে রম্য রচনার অন্তরালে নির্মম বাস্তবতা!




লেখাটি শেয়ার করুন

Leave a Reply