জাবির আহমেদ জুবেল

সুরত মুক্তি যে কারণে পাগল হলেন!

গল্প, ছোটগল্প
লেখাটি শেয়ার করুন

জাবির আহমেদ জুবেল ।। 

 

 

গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর সাদা আর লাল রঙের চিত্রা গাইয়ের ফুন্দে আর পুটকিতে তৃতীয় দিনের মতো হামিদ মিয়ার মুখ চেপে ধরা হলে, সুরত মিয়া গ্রামের সামনে, ফুটবল খেলার মাঠ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা কড়ছ গাছ থেকে বর্ষার ভাসানপানিতে লাফিয়ে পড়েন। ফুটবল খেলার মাঠ থেকে গিয়াস চৌধুরীর বাড়ি খুব একটা দূরে না। সুরত মিয়া, যাকে সবাই সুরত মুক্তি নামেই ডাকে, তাঁর এমন লাফিয়ে পড়ার শব্দ গাইয়ের পুটকিতে নাক মুখ গোঁজে থাকা তাঁর ছোট ছেলে হামিদ মিয়ার কানে এসে হয়তো পৌঁছায়। কিন্তু উড়ো একটা শব্দের পেছনে সময় ব্যয় করার মতো অবস্থায় সে তখন নেই। সে তখন ব্যস্ত তাঁর মুখটা গিয়াস চৌধুরীর হাত থেকে ছাড়াতে, গাইয়ের পুটকি আর ফুন্দের চারপাশে লেগে থাকা লেদা এবং ছেনা থেকে নিজের মুখ বাঁচাতে।
উড়ে আসা শব্দটা যে তাঁর বাপের গাছ থেকে পানিতে লাফিয়ে পড়ার শব্দ সেটা সে কিভাবে জানবে? তাছাড়া যে বাপ তিনদিন ধরে জ্বরে কাঁপতে কাঁপতে চৌকিতে শুয়ে আবুল তাবুল বকছিলো, সে কিভাবে গাছের আগডাল থেকে পানিতে লাফিয়ে পড়বে? সুতরাং ভোরের বাতাস যদিওবা তাঁর কানে শব্দটা এনে পৌঁছিয়ে দেয় তবুও সে তাতে গুরুত্ব দেয় না। তবে শব্দটা শোনার পরপরই কারো কারো চোখ সেটার উৎস খুঁজতে থাকে! যারা ফজরের নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরছিলো, তাঁদের কেউ কেউ গ্রামের মাঝের বাড়ি কিংবা নয়া বাড়ির সাঁকোতে দাঁড়িয়েই শব্দটি শুনেছে এবং সাথে সাথেই তাঁদের চোখ চলে যায় সামনের মাঠের দিকে। লাফিয়ে পড়ার ফলে মাঠের স্থির পানিতে ঢেউয়ের যে খেলা শুরু হয়, সেই ঢেউ আরো পশ্চিমে গিয়ে বাড়িগুলোর সামনে বাঁশ দিয়ে তৈরী আড়ে এসে বারি খেয়ে বিলীন হয়ে যায়, সেই দৃশ্যও কারো কারো চোখে ধরা পড়ে। কিন্তু তখনও ভোরের আবছা অন্ধকার থাকায় গাছ থেকে পড়ে যাওয়া মানুষকে চেনা যায়নি। আরো কিছু সময় পর, চিলাউড়া গ্রামের উপর দিয়ে, গৃহস্থের বাড়ির শাক সবজির বিছড়ায় ফাল্গুন মাসের পেকে যাওয়া লাল টমেটোর মতো একখানা সূর্য দেখা দিলে সবকিছু পরিষ্কার হতে থাকে। তখন মাঠের পাশে, বয়ে যাওয়া সুরাই নদীর পাশের সেই কড়ছ গাছের আগায় একজন মানুষকে দেখা যায়।
হাড্ডিসার, লম্বা, উদোম শরীর, ল্যাঙটি দেয়া লুঙি। টাক মাথায় লেগে থাকা পানিতে সূর্যের আলো পড়ে চিকচিক করছিলো যেনবা ঘরের নতুন টিনের চালে সূর্যের আলো এসে পড়েছে। তখনই মানুষ চিনতে পারে সুরত মুক্তিকে। আবার মূহুর্তের মধ্যেই লাফ দিয়ে পানিতে পড়েন সুরত মুক্তি। তারপর আবার পানি থেকে গাছে ওঠা, আবার লাফিয়ে পড়া। এভাবে দিনে কত বার যে সুরত মুক্তি গাছের আগায় ওঠে আর লাফিয়ে পড়ে সেই হিসাব কেউ দিতে পারবে না। বেলা গড়িয়ে গেলে, সূর্যের উত্তাপ বাড়তে বাড়তে হাওড়ের পানি মৃদু গরম হয়ে পড়লে সুরত মুক্তির লাফিয়ে পড়া কিছুটা কমে আসে। কিন্তু তখন তাঁর মুখ খুলে যায়, সেই মুখ দিয়ে অনর্গল গালি বের হতে থাকে!
অনেকেই অনেক চেষ্টা করে সুরত মুক্তিকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু কেউ পারে না, গাছে উঠতে গেলেই কড়ছের ডাল ভেঙে মারতে শুরু করে। শেষে সবাই, “ইবেটা ফাগল অইগছে” বলে বাড়ি ফিরে যায়।



তিন দিনের জ্বরে ভোগে সুরত মুক্তি পাগল হয়ে যায়। তাঁর পাগল হয়ে যাওয়া কি অনিবার্য ছিলো? যেমন অনিবার্য ছিলো হারিসের পাগল হয়ে যাওয়া! হারিসের পাগল হওয়া তো ছিলো বংশ পরম্পরায়, যেমন তাঁর দাদা হয়েছিলেন, তাঁর চাচা হয়েছিলেন। কিন্তু সুরত মিয়ার তো এমন কিছু ছিলো না! তাহলে কীভাবে তিন দিনের জ্বরে ভুগে সে পাগল হয়ে গেলো! কেউ তাঁর পাগল হয়ে যাওয়ার কোনো হদিস খোঁজে পায় না!
দিন গড়িয়ে যায়। একদিন, দুইদিন, তিনদিন করে দিন চলে গেলেও সুরত মুক্তি একইভাবে গাছ থেকে পানিতে লাফিয়ে পড়তে পড়তে গালিগালাজ করতে থাকেন। মানুষের আড্ডা কিংবা উত্তেজনার জায়গা এখন সুরত মুক্তি দখল করে নেন। বাজারে রাশেদ মিয়ার কাপড়ের দোকানে বিক্রি বাট্টা বাড়ে না কিন্তু আলাপের মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। দোকানের চৌকিতে বসে থাকা কেউ রাড়ইলের, জারলিয়ার, টংগরের কেউবা তারপাশার। প্ল্যাস্টিকের টুলে বসে থাকা তারাপাশার নিয়ামত উল্লাহ বলে উঠে, “ইগুর ফাগ্লের দুস আজকে থেকি নায়। তাঁর বড় ফুয়া মারা গিয়া যে হক্কল জমিন গিয়াসুদ্দির গেছে বেছিলিছলো হউ সময় থেকি মাথাত দুশে ধরছিল।”
বর্ষায় এই হাওর অঞ্চল ছয় মাস পানিতে ডুবে থাকে। খেতকিরির কোনো কাজ নেই, সবাই ঝিম ধরে বসে থাকে। বাড়িতে বসে বসে কেউ কেউ একবেলা হাওরের পানিতে মাছ ধরতে যায়, সকালে একবার নৌকা নিয়ে গরুর জন্য কচুরিপনা কাটতে যায়, সকালে গরু গোয়ালে নিয়ে বাঁধা, খড়-পানি-চিটা খাওয়ানো, গোয়াল ঘর পরিষ্কার করা, কাজ বলতে তো এই যা! বিকাল হলে গ্রামের আবাল বৃদ্ধ সবাই ষোল গুটি বা গাফলা কিংবা কম বয়সী ছোকরারা মার্বেল খেলতে বসে যায়। কেউ কেউ বাজারে গিয়ে ক্যারাম খেলে, তাস খেলে, চা খায়, গল্পগুজব করে। অফুরান্ত অবসরে এই মানুষগুলো এবার সময় কাটানোর নতুন বিষয় পেয়ে যায়। তাঁরা সুরত মিয়াকে নিয়ে মেতে ওঠে। মানুষ তখন সুরত মিয়ার পাগল হওয়ার নানা সূত্র খোঁজে, নানা যোগ বিয়োগ মিলায়! নামাজ পড়ে মসজিদের ঘাটে বসে থাকা মুসল্লির কেউ কেউ মৃদু কণ্ঠে বলতে থাকে, সুরত মুক্তি ইলেকশনের পরের দিন রাতে ঘরে ফিরে যখন শোনে তাঁর মেয়ের জামাইকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে তখন থেকেই সে পাগল হতে শুরু করে। কেউ আবার বলতে থাকে গিয়াস উদ্দিন প্রথম যেদিন তাঁর মিলিটারির মতো হাত দিয়ে সুরত মুক্তির ছোট ছেলে হামিদের মুখ তাঁর গাইয়ের ফুন্দের সাথে চেপে ধরে সেই খবর শোনেই সে জ্বরে আক্রান্ত হয়, সেখান থেকেই একেবারে পাগল হয়ে যায়।
গাছে ওঠার তিনদিনের দিন আসরের বেলা, সুরত মুক্তি কড়ছ গাছের বড় একটা ডালে প্রায় নিস্তেজ হয়ে বসে থাকেন। হয়তো তাঁর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছে কিংবা এমনিতেই ক্লান্ত হয়ে বসে আছেন। গ্রামের কাউয়ুম হাজাম তখন বাল্লা বিলে কারেন্টের জাল দিয়ে মাছ ধরে বাড়ি ফিরছেন। মাঠের পাশে থাকা কড়ছ গাছের কাছে আসতেই কাউয়ুম হাজামকে চমকে উঠতে হয়! হ্যাঁ তাঁকে চমকে উঠতেই হয়! গাছের উপরে সুরত মিয়ার মুখামুখি বসা দিলারা নটি! হাজাম বারবার তাকায়, বারবার একই মানুষকে আবিষ্কার করে, দিলারাকেই! এই তো এবার যে তাঁর হাসিও শোনা যাচ্ছে! সেই পুরনো কলকল শব্দের হাসি! কাউয়ুম হাজামের মাথা ঘুরে, সে বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়, কখনো মনে হয় দিলারা কোনো দূর দেশে স্বামীর ঘর করতে গেছিলো আবার পরমূহুর্তেই তাঁর মনে পড়ে সেই নিঃসঙ্গ সকালের কথা! ছিয়াত্তর সনের কথা, হিজল গাছে দিলারার লাশ ঝুলে থাকার কথা। ছিয়াত্তর সনের মাঘ মাসের এক ভোরে নয়াবাড়ির কেউ একজন ঊকুইন দিয়ে পাশের বিল থেকে ক্ষেতে পানি দিতে যাবে বলে বাড়ি থেকে বের হতেই দেখে বাড়ির সামনে সারি বাঁধা হিজল গাছের একটা ডালে দিলারার লাশ ঝুলে আছে!



কাউয়ুম হাজাম হাতের শক্তি বাড়ায়, বৈঠা দ্রুত চালাতে থাকে। কিন্তু সুরত মিয়াকে এড়িয়ে যেতে পারেন না! গাছ থেকে সুরত মুক্তি কাউয়ুম হাজামকে ডাক দেন, কাউয়ুম হাজাম সুরত মিয়ার ডাক না শোনার ভান করে দ্রুত চলে যায়। সুরত মুক্তি জোরে জোরে হাসে। গল্প করে দিলারার সাথে। দিলারার মরে যাওয়ার আগে কি কখনো সুরত মুক্তি তাঁর সাথে এভাবে কথা বলেছিলো? সে কোনোভাবেই কিছু মনে করতে পারে না। “ফাওগল অইগেছি অনে আর কিতা মনও পরব? হক্কলতা ভুলি গেছি!” সুরত মুক্তি এই বলে জোরে জোরে হাসে! দিলারাও হয়তো তাঁর হাসিতে যোগ দেয়। পাগল হয়ে গেলেও তখন যেনো সুরত মুক্তি ক্ষণিকের জন্য ভালো হয়ে যায়! মনের কোণে উঁকি দেয় দিলারার প্রথম স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে আসার দিন! উঁকি দেয় দ্বিতীয় বিয়ের দিন তা ভেঙে দিয়ে বরযাত্রী সবাই দিলারাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার দৃশ্য। সুরত মুক্তির কানে সেদিনকার গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর কথা ভেসে আসে! তাঁর থেকে হাত দশেক দূরে বসেই তো সে বরের এক চাচাকে বলছিলো,
“……দামান্দের দুই নম্বর বিয়াতে কিতা অইছে বা, বেটাইন্তের লাগি আরকবার কইন্নার অভাব নি? ……হেশেদি আইয়া নটি বেটি নেওয়া লাগে নিবা?
কিতা কইন বাইছাবে? নটিবেটি নিতাম কেনে?
তুমিতাইন কুন্তা জানও নানি বা! সংগ্রামের সময় পাইঞ্জাবীর গেছে নু আছিল।…… আগর বিয়াও এরলাগি ভাংছিল!”
আর কিছু বলতে হয় না! বিয়েটা এখানেই ভেঙে যায়। গিয়াস উদ্দিন বলেন না, সে-ই দিলারাকে পাঞ্জাবীর স্টিমারে ধরে নিয়ে দিয়ে আসছিলো। এতো বছর পর, তারাপাশার শত শত বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা এই কড়ছ গাছের ডালে মরে যাওয়া দিলারাকে সামনে রেখে সুরত মুক্তি বিড়বিড় করে সে কথাই বলে, তারপর আবারো মুখের গালি শুরু হয়ে যায়।
গায়ের একমাত্র মুক্তি সুরত মিয়া! দালালও সেই একজনই ছিলো, গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী! সুরত মুক্তি আর দালাল গিয়াস উদ্দিন এখনো বেঁচে আছেন কিন্তু বীরাঙ্গনা দিলারা বেগম উঠতে বসতে গ্রামের মানুষের মুখে নটি বেটি নটি বেটি শোনতে শোনতে মৃত্যুকে বেছে নেন!
গিয়াস উদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে সুরত মুক্তি গালি দিতে থাকেন। লেরখাউরার ফুয়ারে আমি ডরাইনি? ই লেরখাউরায় সংগ্রামের সময় কত মুক্তিরে ধরাইয়া দিলো, কত মানুষ মারলো। সংগ্রামের পরেও কতো মানুষ মারলো। জাইল্লার গাঙ্গও মার্ডার খরলো। মাইনশের খেতকিরি লুইট্টা খাইয়াও শান্তি অইছে না! আমার আবাবমিয়ারে হে খাইলো, আমার সব জমিনও গিলিলিলো, অনে আইসে আমার হামিদমিয়ারে গরুর চেনা খাওয়াইয়া মারতো! ……..দলালওখলতেরে আমি অখন আর ডরাই না, ডরানির দিন গেছেগি, এবুলকা ই চুত্মারানীর ফুয়ারে লইয়া মরমু বলে গাল দিতে দিতে নিস্তেজ হয়েই গাছের বড় একটা ডালে হেলান দিয়ে শুয়ে থাকেন। শীর্ণ দেহটা যেনবা গাছেরই আরেকটা ডাল। এই তিন দিনে তাঁর শরীর আরো শুকিয়ে গেছে, তিন দিনে গাছে থেকেই মাত্র দুবেলা ভাত খেয়েছেন। সুরত মুক্তি গাছের উপর নেতিয়ে পড়ে থাকেন, তাঁর এই শীর্ণ শরীরটাকে গাছের একটা ডাল ভেবেই হয়তো একটা মইসাপ তাঁর পেটের উপর দিয়ে চলে চলে যায়! তাঁর চোখে হয়তো একসময় ঘুম আসে। কিন্তু অনেক পরে যখন তাঁর ঘুম ভাঙ্গে তখন তিনি নিজেকে তাঁর টিনের ঘরের ভেতরই আবিষ্কার করেন। টিনের চালে ঝুম বৃষ্টি পড়ার শব্দ তাঁর কানে আসে। বছর তিনেক আগে মরে যাওয়া তাঁর বড় ছেলে আবাব মিয়ার বৌকে দেখা যায় ঘরের চালের যে যে জায়গায় পানি পড়ে সেখানে ডেগ ডেকসি রেখে দিতে, নয়তো ঘরের ভেতর পানির বন্যা শুরু হয়ে যাবে। আবাব মিয়ার বৌকে দেখে তাঁর মুখ আবারো খুলে যায়। এবার আর গিয়াস উদ্দিনকে গালি দেন না, তাঁর ছেলেকেই দেন! “মরবে যেবলা মরিযা! আমারেজুন দলালের ফাওর চিফাত ফালাইয়া নিয়া মারতে?”
আবাব মিয়া চার বছর আগে মারা যায়। মেরুদণ্ড ভেঙে মারা যায়। সেই সাথে মেরুদণ্ড ভেঙে যায় গোটা একটা পরিবারের। বছর চারেক আগে, দেশের উন্নয়ন চাকা যখন সবে মাত্র ঘুরতে শুরু করে, সেই সাথে লুটের চাকা, চেতনাবাজীর চাকা, তখনি সুনামগঞ্জের সকল হাওর এক অকাল বন্যায় তলিয়ে যায়। এক মুঠো ধানও সেবার কাটা যায়নি। সরকার থেকে সাহায্য আসে, এনজিও থেকে আসে। কিন্তু দু মাস পরই ঘরের সব খাবার শেষ হয়ে যায়। বেঁচে থাকার জন্য যখন এই গ্রামের যুবক আর প্রৌঢ়রা জীবনের প্রথমবারের মতো ঢাকা শহরে পাড়ি দেয় তখন তাঁদের সঙ্গী হয় আবাব মিয়াও। কিন্তু মৃত্যু যেখানে নিয়তি সেখানে বেঁচে থাকা কি এতো সহজ! সাত তলা বিল্ডিঙে নির্মাণ কাজ করতে করতেই একদিন নিচে পড়ে যায়। সাথে সাথেই মরে না। দিন দশেক বেঁচে থাকে, হাসপাতালে।



এই দেশ এমনি এক দেশ সেখানে চিকিৎসার জন্য কড়ি কড়ি টাকা ঢালতে হয়। নয়তো চিকিৎসা মিলবে না, রাস্তায় পড়ে থেকে মরতে হবে! সুরত মুক্তিও নিজের সব সম্পদ ঢেলে দেন হাসপাতালে। এই দশ দিনে গিয়াস উদ্দিনের কাছে সুরত মুক্তির সব অহংকার মাটিতে মিশে যায়, তাঁর জমি কিনে নেয়ার জন্য গিয়াসউদ্দিনের পায়ে পড়েন! যদি দালাল বিত্তশালী হয়, ক্ষমতাবান হয়, বেঁচে থাকার জন্য তাঁর পায়ে পড়তেই হয়! তখন তাকে ক্ষণিকের জন্য ভুলে যেতে হয় মুক্তিযুদ্ধের কথা! তাকে ভুলে যেতে হয় মিলিটারির লঞ্চের ভেতরে নিজের সর্বস্ব হারানো দিলারা বেগমের আত্মচিৎকারকে পাশে ফেলে মিলিটারির প্রতি গিয়াসউদ্দিনের কৃতজ্ঞতার হাসি! জমি বিক্রি হয়, টাকা খরচ হয় কিন্তু আবাব মিয়ার আর বেঁচে থাকা হয় না। দেড় বছরের সন্তান রেখেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। বেঁচে থাকার জন্য সুরত মুক্তির কাছে তখন আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না! স্বাধীন দেশে একজন মুক্তি তাঁর ছেলেকে বাঁচানোর জন্য, নিজেকে বাঁচানোর জন্য, দালালের পায়ে গিয়ে পড়ার, তাঁর অনুগ্রহ পেয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করার চেয়ে ছোট আর কীইবা থাকতে পারে? তবুও তো আমাদের বেঁচে থাকতে হয়! কিন্তু ভাঁড়ালে ধান, মখটিতে চাল না থাকলে কিভাবে বেঁচে থাকা যায় সেই হিসাব সুরত মুক্তি করতে পারেন না! যখন যৌবন ছিলো, শক্তি ছিলো, তখন বেঁচে থাকার ভিন্ন হিসাব করা যেতো। অন্য কারো হিসাবের খাতা বন্ধ করে হলেও বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করা যেতো। যেমন করেছিলো ’৭৪ সনে। মদব্বির ডাকাতের কাছে গিয়ে তিনিই তো বলেছিলেন, “মদব্বির বাই, ফেটও ভাত নাই, উগারো ধান নাই। কিচ্ছু একটা তো করা লাগবো। আমারে তুমার দলও ঢুকাও।” হ্যাঁ তাঁর সবকিছুই মনে আছে, যে বন্দুক দিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলো এবার সে সেই বন্দুক দিয়েই কুশিয়ারা নদীতে গুলি ছোঁড়ে, লঞ্চ ডাকাতি করে! আরো কয়েকটা বছর তাঁকে এভাবেই চলতে হয়। কিন্তু সেই যৌবন এখন আর নেই। হাড্ডিসার দেহ নিয়ে এখন সে কীইবা করতে পারে? এবার সে চুরির পথই বেছে নেয়! কিন্তু কীইবা চুরি করবে? সবারই তো একই দশা, এক গিয়াসউদ্দিন ছাড়া! ধানের ব্যাপারী গিয়াসউদ্দিনের ধানের ভাঁড়ালের তালা ভেঙে ধান চুরি করতে গিয়ে সুরত মুক্তি ধরা খেয়ে যান! বিচার হয় না। চড় থাপ্পড়, জুতা বারি খেয়েই বেঁচে থাকেন। কিভাবে কিভাবে যেন সে বছরটা কাঁটিয়ে দেন। কিন্তু পরের বছরেই তাঁকে আবার গিয়াসউদ্দিনের বাড়িতে ছুটতে হয়। চৈত্র মাসের এক মাগরিবের নামজের পড়ে মসজিদ থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেন নদীপাড় ধরে দক্ষিণের গ্রাম জারলিয়ার দিকে। বেতাউকা গ্রামের উপর দিয়ে, অগ্নি কোণ দিয়ে বয়ে আসে বাতাস, নদীর উপর দিয়ে আসতে আসতে চৈত্রের গরম বাতাস শীতল হয়ে যায়। বাতাসে পাতলা পাঞ্জাবীটা ওড়ে, বুকে এসে বাতাস লাগে কিন্তু মনে এই বাতাস ছোঁয়ে যায় না। মন বড় অশান্ত! ‘চইতমাসের নিদান’ যে কতোটা ভয়াবহ তা হাওরপাড়ের একজন মানুষই শুধু বুঝতে পারে। এই মাসে শেষ হতে হতে সব কিছু শেষ হয়ে যায়, কারো হাতে তো টাকা থাকেই না, যাই থাকে তাও শেষ হয়ে যায়। ভাঁড়ালের ধান শেষ হয়ে যায়, মখটির চাল শেষ হয়ে যায়, গরুকে খাওয়ানোর খড়ও শেষ হয়ে যায়। এতোই নিদান পড়ে যে নদীর পানি, বিলের পানি শুকিয়ে যায়, হারিয়ে যায় মাছ। এই নিদানবেলা সুরত মুক্তির মনে শান্তি ফিরবে না। তিনি নদী পাড় দিয়ে হেঁটে হেঁটে জারলিয়ার খেয়া ঘাটে চলে যান। সন্ধ্যার আকাশের আধো আধো অন্ধকার মিলিয়ে গিয়ে রাত হয়ে গেলে খেয়া ঘাটে হিজল গাছের নিচে সুরত মুক্তিকে বসে থাকতে দেখা যায়। গ্রামের কোনো এক ছেলে হয়তো কোথাও থেকে খেয়া পার হয়ে বাড়ি ফিরছিলো, সে সুরত মুক্তিকে হিজল গাছের নিচে বসে থাকতে দেখে প্রশ্ন করে, “কিতাবা সুরত চাচা, গোদারা ঘাটও কিতা করো? যাইতায়গিনি বাড়িত?” কিন্তু কোনো উত্তর মিলে না। ছেলেটাও অপেক্ষা না করে চলে যায়। আরো বেশ কিছু সময় পরে, আকাশে চাঁদ উঠলে এই পৃথিবী নতুন আরেকটা রূপে হাজির হয়। সারা পৃথিবী চাঁদের আলোয় যেন-বা একটা কালো দুঃখী চাদরে ঢাকা পরে যায়। এই হাতের কাছেই হাওর, বিল, ডোবা, হাওরের ক্ষেতে কৃষকের কাঁচা ধান কিংবা গ্রামের সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরাই নদী, সবকিছুই যেন এই চাঁদের আলোয় কৈশোরে মা হারানোর বেদনায় নীল হয়ে যাওয়া কিশোরী হয়ে যায়। এমন দুঃখী দুঃখী রাতে সুরত মুক্তি গিয়াসউদ্দিনের বাংলা ঘরে গিয়ে হাজির হন।



গিয়াসউদ্দিনের দেখা পেলে সুরত মুক্তি তাঁর বাম হাত দিয়ে ডান পাশের পিঠ চুলকাতে চুলকতেই বলেন “বাইছাব আমার ফুয়াগুতারে তুমার ঘরও ইবার বাইরাত রাখবায় নি? হে সব খাম খরতা ফারে।” এভাবেই এক দুঃখভরা রাতে বেঁচে থাকার জন্য তাঁর ১৪ বছরের ছোট ছেলে হামিদ মিয়াকে বর্ষার ছ’মাসের জন্য পনেরো হাজার টাকা, একটা লুঙি এবং একটা গামছায় গিয়াসউদ্দিনের ঘরে কামলা দিয়ে আসেন সুরত মুক্তি।
এখন এই বর্ষায় গিয়াস উদ্দিন বড় আনন্দের একটা কাজ পেয়ে গেছেন! হামিদ মিয়ার মুখ সুযোগ পেলেই তিনি তাঁর সদ্য বিয়ানো গাইয়ের পুটকির সাথে চেপে ধরেন, পরম আনন্দে! এই নিয়ে তিন দিন এভাবেই তাকে চেপে ধরেন গিয়াস উদ্দিন। হামিদ মিয়া গাইয়ের পুটকির গন্ধ শুঁকে, কখনোবা তাঁর মুখ গাইয়ের পুটকিতে লেগে থাকা লেদা ছেনায় লেগে যায়! কোনোভাবেই সে নিজেকে এ থেকে বাঁচাতে পারে না।
ক’দিন আগে গিয়াস উদ্দিনের গাইটা ভোর রাতে বিয়ায়। বিয়ানোর কয়কঘন্টা পর যখন গাই তাঁর ইল্লত ছেড়ে দেয় তখন সেটা আর হামিদ মিয়া দেখে নাই। ফলত, গাই তাঁর ইল্লত নিজেই খেয়ে ফেলে। সকালে যখন গিয়াসউদ্দিন জিগায় ইল্লত ফেলেছে কিনা? হামিদ মিয়া কোনো কথা বলে না। এক সময় গিয়াসউদ্দিনের চিল্লানি খেয়ে তাঁর মাথা ডানে বায়ে ঘুরায়। না বোধক উত্তর শোনে গিয়াসউদ্দিনের মাথায় আগুন ওঠে। ইল্লত খেয়ে ফেলায় গাইয়ে দুধ দেয়া কমে যাবে ভেবে গিয়াসউদ্দিন চিৎকার করে হামিদকে তাঁর বাপের নামে কিছু বলে কিন্তু কিছুই বুঝা যায় না, গিয়াসউদ্দিনও হয়তো বুঝতে পারে তাঁর কথা কিছুই বুঝা যায় নি। তখন তাঁর মিলিটারির হাতের মতো হাত দিয়ে বালক হামিদের মাথায় থাপ্পড় দেয়, থাপ্পড় খেয়ে তাঁর সামনেই দাঁড়িয়ে থাকা সদ্য বিয়ানো গাইয়ের পাছায় গিয়ে তাঁর মাথা বারি খায়। তারপর আবারো থাপ্পড় মারেন, তবে এবার তাঁর মুখ গিয়ে লাগে একদম গাইয়ের ফুন্দে, সাথে সাথে তাঁর মাথাকে গিয়াসউদ্দিন গাইয়ের ফুন্দের সাথে চেপে ধরেন, সেখানে লেগে থাকা রক্ত, ছেনা সবই তাঁর মুখে ঠোটে লাগতে থাকে। সদ্য বিয়ানো গাই খুব একটা নাড়াচাড়া করতে পারে না, হামিদ মিয়াও গিয়াসউদ্দিনের মিলিটারির হাত থেকে বের হতে পারে না। এভাবে অনেক বার থাপ্পড় খেতে খেতে মুখ দিয়ে তাঁর রক্ত বের হয়। ছেনা-গোবর খাওয়া থেকে নিজেকে বাঁচানো চেয়ে তখন তাঁর নিজেকে বাঁচানোই অনেক বড় হয়ে দেখে দেয়। এক সময় দৈত্য থামে, হামিদ বাড়ি দৌড়ে! ছেলেকে এভাবে দেখে সুরত মুক্তি ঝিম মেরে বসে থাকেন, একটা শব্দও তাঁর মুখ দিয়ে বের হয়নি। ঠিক কত সময় এভাবে বসে থাকেন সেটা তাঁর বাড়ির কেউ খোঁজ না রাখলেও দেখা যায় দু’দিন পর সুরত মুক্তির জ্বর আসে।
সুরত মুক্তি তাঁর এতোকিছুর জন্য দায়ী বড় ছেলেটাকে তাই সে গালাগালি করছিলেন। তাঁর সারা শরীর জ্বরে কাঁপছিলো, মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছিলো না তবুও গালি দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান। তাঁর গালির শব্দ চাপিয়ে তখন তাঁর নাতি, আবাব মিয়ার তিন বছরের ছেলে রিয়াদের কান্না শোনা যায়। তাঁর কান্নায় তাঁর মা “অত অত জ্বালনি, অত জ্বালানি জ্বালাও খেনে” বলে গুড়ুম গুড়ুম করে তাঁর পিঠে কিল দিতে থাকে!



মাইর খেয়ে রিয়াদের কান্না যখন টিনের চালের বৃষ্টির শব্দকে হারিয়ে দিচ্ছিলো তখন বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ঘরে ঢুকে তাঁর মেয়ে হাফিজা বেগম। কাঁখে এক বছরের মেয়েটা, হাতে ধরা সাড়ে তিন বছরের মেয়ে, মেয়ে দুটোও একদম কাঁকভেজা। সুরত মুক্তির গালি থেমে যায়। মেয়েটি কি তাঁর পাগল বাপকে দেখতে এসেছে? নাকি তাকে একেবারে বাড়ি ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে? ছ’মাস ধরে তাঁর স্বামী জেলে! সুরত মুক্তি মনে করতে চেষ্টা করেন, ইলেকশনের দু’দিন পরেই তো তাকে পুলিশে ধরে নিয়ে যায়। পাগল হয়েও তিনি স্পষ্ট সে রাতের কথা মনে করতে পারেন। শীতের রাত। আব্দুল আলীর বাংলায় এফএম রেডিওতে বিবিসির খবর শোনছিলেন, একসময় শোনেন সরকারী দলকে ভোট না দেয়ায় সুবর্ণচরে চার সন্তানের এক মাকে সরকারী দলের নেতারা ধর্ষণ করে। হঠাৎ করেই বুকটা ধক করে ওঠে, যেমন ধক করে ওঠে এই চার সন্তানের মায়ের জন্য তেমনি তাঁর নিজের মেয়ে হাফিজার জন্যও! হাফিজার স্বামী আবার অন্য আরেক দলের এক নেতার খুব কাছের লোক, পেছনে পেছনে ঘুরে। এখন না জানি তাঁর কী অবস্থা? এই চিন্তা করে করে যখন তিনি দ্রুতই বাড়ি ফিরছিলেন, ফেরার পথে নয়া বাড়ির খালে প্রথম দিনের মতো তাঁর চোখে দিলারা নটি ধরা পড়ে! তারপর বহুবার দিলারা সুরত মুক্তির সামনে আসে। সুরত মুক্তি ভুলে যেতে পারেন না দিলারার সেইসব দিনগুলোর কথা, যখন গ্রামের মানুষ ভুলে যায় দিলারার বাপ মায়ের রাখা তাঁর নাম, তখন তাঁর নতুন নাম হয়ে যায় নটিবেটি। ’৭১ একটি বিকালই তাঁকে নটি বেটি বানিয়ে ফেলে! সদ্য বিয়ে করা স্বামীর ঘরটাও তাঁকে সেই বিকালের কারণে হারিয়ে ফেলতে হয়। অথচ তারাপাশার আকাশে সেই বিকেল নিয়ে আসা দেশবেশ্যা গিয়াসউদ্দিন তখনো সুন্দর জীবন যাপন করছেন! বিচার-আচার, পঞ্চায়েত সবই তাঁর হাতেই থাকে। আরো বেশ কয়েক বছর পরে তাঁর ছেলে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়েই উপজেলা চেয়ারম্যান হয়! খুব শিগিগির হয়তো সে এমপিও হবে। দিলারাকে পাঞ্জাবীরা মারতে পারেনি। অর্ধ মৃত করে রেখে গেছিলো কিন্তু এই স্বাধীন দেশের মানুষেরাই তাকে পুরোদমে মৃত্যুকে বেছে নিতে বাধ্য করেছিলো। এই এলাকাবাসী ভুলে যাবে সেই বিকেলের নেপথ্যে থাকা মানুষটির কথা, ভুলে যাবে এই দেশের স্বাধীনতা নামক অনেক অনেক দূরের এক বস্তু পাওয়ার জন্য কোন এক অখ্যাত, হাওড়পাড়ের প্রত্যন্ত গ্রাম তারাপাশার এক মেয়ের নিজেকে বলি দেয়ার কথা। মানুষ তখন শ্লোগান দিবে দালালের ছেলের মিথ্যা মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে! শীতের সে রাতে সুরত মুক্তির মনে উঁকি দেয় ভয়, মনে প্রশ্ন জাগে, দিলারার মতোই কি সুবর্ণচরের সেই মা মারা যাবে? শুধু কি এই চার সন্তানের মা ই ধর্ষিত হন, নাকি এই দেশটা নিজেই ধর্ষিতা? দিলারাকে পাশ কাঁটিয়ে যখন সুরত মুক্তি ঘরে ফিরেন, ঘরে তখন তাঁর বউয়ের কান্না শোনা যায়। তাঁর মেয়ে জামাইকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে! নাশকতার অভিযোগে!
হাফিজা পুরোদমে ভিজে গেছে। তাঁর কাপড় দিয়ে পানি পড়ছে। কাঁখের মেয়েটাকে ঘরে রেখেই সুরত মুক্তির তক্তপোষের পাশে যেতেই সুরত মুক্তি হাসি দিয়ে মেয়েকে বলে “আমি বেটি ফাগল অইগেছি। মাথায় খাম করে না”।



সারা রাত ধরে বৃষ্টি হয়। সারা ঘর ভাঙা টিনের চালের পানিতে ভেসে গেলেও কখন যে ভোর হয় সে খবর সুরত মুক্তির ঘরের কেউ বলতে পারে না। সুরত মুক্তিকে নিয়ে ক’দিন ধরে এই পরিবারের কম ধকল পোহাতে হয়নি। আজ সবাই শান্তির ঘুম ঘুমোচ্ছে! কিন্তু শান্তির ঘুমে ছিঁড় ধরে মানুষের চিল্লানিতে! ঘরের মানুষ শোনতে পায় কেউ একজন বলছে, সুরত মুক্তির লাশ নাকি মাঠের মধ্যে ভেসে উঠেছে! আর তখনই সুরত মুক্তির মেয়ে হাফিজা খেয়াল করে ঘরের ভেতরে তক্তপোষে সুরত মুক্তি নেই। কখন যে রাতে ঘর থেকে তিনি বেরিয়ে গেছিলেন সেটা ঘরের কেউ খেয়ালই করেনি।
যেদিন দেশের পত্রিকায় কিংবা টিভিতে বড় শিরোনাম হয়, দেশের বড় বড় ধনকুবেরদের শত শত কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ সরকার খেলাপি ঋণ বলে মওকুফ ঘোষণা করেছে, ঠিক সেদিনই সুনামগঞ্জের হাওড়পাড়ের এক অখ্যাত গ্রাম তারাপাশার মানুষেরা জোহরের আজানের আগে আগে ঝিরঝির বৃষ্টির মধ্যে একটা ভারী লাশ বয়ে নিয়ে যায় তাঁদের গ্রামের এক হাতল ভাঙা কাঠের খাটিয়ায় করে।

২২.০৬.২০১৯ খ্রী.
তারাপাশা
দিরাই, সুনামগঞ্জ।



লেখাটি শেয়ার করুন

Leave a Reply