sahabuddin-bijoy

চোখ

গল্প, ছোটগল্প
লেখাটি শেয়ার করুন

শাহাবুদ্দিন বিজয়।।

 

চাচার জোড়াজোড়ির কারণে নীলের সাথে দেখা করা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্মান ১ম বর্ষের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সায়ানা নীল। লম্বায় ৫ ফিট ৫ ইঞ্চি, দেহের গড়ন হালকা-পাতলা। নাক উচু গায়ের রঙ দুধে-আলতা, অসাধারণ চোখ এবং সুকেশী। এমন সুন্দর মেয়ে কমই দেখা যায়।

গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন হওয়ার চার বছরের মাথায় প্রথম সারির একটি চাকরির সুযোগ পাই। জয়েন করতে না করতেই চাচা আমার বিয়ে নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছেন। তার কলিগের মেয়ে নীল, অফিসে বসেই বিয়ে পাকা করে ফেলেছেন। আমাকে কিছু বলার সুযোগও দেননি। বললাম যে চাচা মেয়ের বয়স আমার চেয়ে অনেক কম, তাকে আমি চিনিও না আগে থেকে। আর আমার কিছু বলারও তো থাকতে পারে। উনি বললেন একবার দেখা করে তারপর যেন সিদ্ধান্ত নেই। হয়তো ভেবেছেন অমন চেহারা দেখে না করতে পারব না।

অনিচ্ছা সত্বেও নীল এর নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করি। আগে থেকেই তাকে আমার নম্বর দেওয়া ছিলো। জিজ্ঞেস করলাম কবে ও কোথায় বসতে তার সুবিধা হয়। বললো আগামীকাল ও ধানমন্ডির একটি ক্যাফের এড্রেস মেসেজে পাঠিয়ে দিচ্ছি বলে ফোন রাখলো।

আমাকে বিকেল ৫টায় থাকার কথা বলেছে নীল। আমি অনিতাকে ঠিক সাড়ে পাঁচটা নাগাদ একই ঠিকনায় আসতে বললাম। ভালো কথা, অনিতার পরিচয় দেওয়া হয়নি। অনিতা এবং আমি সমবয়সী হলেও দুটো ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেছি। প্রায় ৯ বছর হলো আমরা পরিচিত এবং সাড়ে সাত বছর ধরে দাপ্তরিক প্রেমিক-প্রেমিকা। কেন ধানমন্ডি যাবে এ কথার উত্তরে বলেছি সারপ্রাইজ আছে। ও বললো আই হেইট সারপ্রাইজ! বললাম চলে এসো সময়মত।

বিকেলে ক্যাফেতে পৌঁছোবার কিছুক্ষণ পরেই নীল আসে। সিনেমার নাইকার মত এন্ট্রি একেবারে। তিনটি বাইকের মাঝের বাইকের পেছনে নীল। বাকী চারজন তার বন্ধু হবে সম্ভবত। আমি বোকাসোকা লোক, ফর্মাল স্যুট পড়ে এসেছি এমন মেয়ের সাথে দেখা করতে, এটা ভেবেই নিজেকে বোকাচণ্ডী লাগছে। তার বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো, একজনের মুখ দিয়ে কোনো কথা বেড় হলো না, এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এই ছেলেকে দেখে আমার বন্ধু কামালের কথা মনে পরে গেলো, কামাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে বসে দিনরাত গাজা সেবন করত আর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত।

আমি আর নীল এক টেবিলে বসলাম আর তার বন্ধুরা অন্য টেবিলে। শুরুতেই নীল বললো, “দেখুন আমি স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড কথা বলতে পছন্দ করি, আপনাকে বিয়ে করতে আমার কোনো সমস্যা নাই, কিন্তু আমি এত দ্রুত বিয়ে করতে পারব না। আমাকে কমপক্ষে আরো ৪ বছর নিজের লাইফটা ইনজয় করার সুযোগ দিতে হবে।” আরো অনেকগুলো রিকোয়ারমেন্ট দিলো নীল। আমি বললাম, “আপনাকে আমি বিয়ে করছি এটাই বা আপনি সিউর হলেন কি করে?” “আপনাদের মত সরকারি অফিসারদের চেনা আছে, চাকুরিতে ঢুকেই আপনারা সুন্দর মেয়ে খুজে বেড়ান।” আমি একটু মুচকি হেসে বললাম, “আপনি কি ফেইসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে ব্যর্থ জীবনের গল্প পড়েন খুব?” নীল ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো, “কেন?” বললাম “না এমনিই জিজ্ঞেস করলাম। দেখুন আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারব না। আর আপনার সাথে দেখা করা শুধু আপনার বাবা আর আমার চাচার ইচ্ছেতেই। তাছাড়া আমি অন্য একটি মেয়েকে পছন্দ করি।” নীল বললো, “এটা আমাকে আগে জানালেই পারতেন, তাইলে এখানে সময় নষ্ট না করে ডিয়াবাড়ি ঘুরে আসতাম ওদের সাথে। হুদাই টাইম নষ্ট করলেন আমার।”

এরমধ্যে অনিতা ক্যাফের সামনে এসে কল দিলো, ভেতরে আসতে বললাম। ভেতরে আসার পর নীলের সাথে অনিতার পরিচয় করিয়ে দিলাম। অনিতা কথা বলতে চাইলেও নীল খুব একটা আগ্রহ দেখালো না। তাই অনিতা চুপ করে বসে থাকলো। খাবার অর্ডার করে টুকটাক কথা বলতে বলতে খাবার শেষ করলাম। নীল উঠতে চাইলে, আমি নীলকে একটি অদ্ভুত অনুরোধ করি। অনিতা আর নীলের একসাথে একটি ছবি নেওয়ার। নীল বিরক্তির সাথে বললো আচ্ছা নেন। ছবি তুলে একটু জুম করে নীলকে বললাম ছবিটি একটু ভালো করে দেখুন, কি দেখছেন? নীল বললো, “কি আর দেখব, দুজন মেয়ের চোখ, আল্লা আমার যে আইভ্র নষ্ট হয়ে গেছে তা খেয়াল করি নাই।” আমি বললাম, “দেখুন, অনিতা ছবিতে কত প্রাণবন্ত, বিকজ শি ওয়াজ লুকিং টু মি, শি ফিলস মাই প্রেজেন্স। অথচ ওর পাশে যে দাঁড়িয়ে আছে তার প্রতি মানে আপনার প্রতি রাগ হওয়া উচিত। আর আপনি বিরক্ত, কারণ, না আমি না অনিতা, কেউই আপনার পছন্দের নয়। জীবনে এমন কাউকে জীবন-সঙ্গী করা উচিত, যে সামনে থাকলে কোনো কিছুতে আগ্রহ না থাকুক কিন্তু বিরক্তি যেন না আসে। ভালো চাকুরী বা টাকাওয়ালা এধরণের লোকের সাথেই বিয়ে হতে হবে এমন কিছু ভেবে রাখলে আসলে আপনি নিজ আত্মার ক্ষতি করছেন।

নীল আমার কথা না শোনার ভান ধরে চললাম বলে ক্যাফে থেকে বের হয়ে গেলো। আমি বিলের জন্য ওয়েটারকে ডাকলাম, বিল দেখে আমার চোখ কপালে। ওয়েটার কে জিজ্ঞেস করলাম, “ভাই এটা কি এই দুই টেবিলেরই বিল?” বললো, “হ্যা স্যার।” আবার জিজ্ঞেস করলাম, “ওনারা কি কোনো পার্সেল নিয়ে গেছে? নাকি এখানে বসেই খাইছে?” “স্যার, এখানে বসেই খেয়েছেন ওনারা। ঐ টেবিলের খাবার গুলো আমাদের প্রিমিয়াম আইটেম ছিলো স্যার”। বিল দেখে অনিতা হাসিই থামাতে পারছে না। ৭ জন মানুষ একবেলা খাবার খেয়ে এগারো হাজার টাকা বিল করতে পারে তা আমার মত সরকারি অফিসারের জানা ছিলো না। সাথে এত টাকা ক্যাশ ছিলো না, আর কার্ডও ব্লক ছিলো একটি ভুল ট্রানজেকশনের কারণে। অনিতা বললো, ” হবু জামাই এখন ক্যাফের বাসনকোসন মাজা শুরু করো, বউতো বন্ধুদের নিয়ে লং ড্রাইভে গেছে।” আনিতার কাছ থেকে টাকা চাইলাম, না করলো। পরেরবার বললাম অনিতা আপু বাকী টাকা ধার দাও, রেগে মেগে টাকা বের করে দিলো অনিতা। মজার একটা ব্যাপার, অনিতাকে আপু বললে ভীষণ ক্ষেপে যায়। তাই মাঝে মধ্যে ইমোশনাল ব্লাকমেল করতে এই শব্দটা ব্যবহার করি।


লেখাটি শেয়ার করুন

Leave a Reply